বরিশাল অঞ্চলে দেশে উৎপাদিত ডালের অর্ধেকই উৎপাদিত হয়। এই অঞ্চলের কৃষকরা এবারো প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে প্রায় পৌনে ৫ লাখ টন বিভিন্ন ধরনের ডাল জাতীয় ফসল উৎপাদন করছেন। বিশেষত মুগডালের ৮০ শতাংশ এবং খেসারী ডালের প্রায় ৫০ শতাংশই বরিশালে উৎপাদিত হয়, যা দেশের চাহিদার অনেকটা পূরণ করে।
এ বছরের শীতকালীন মুগ, খেসারী, ছোলা ও মুসুরী ডালের আবাদ ইতোমধ্যে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। গত বছরও বরিশালে সাড়ে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টন ডাল উৎপাদিত হয়েছিল। তবে, এই অঞ্চলে এখনও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ডাল বীজের ব্যবহার অতি সীমিত, যার কারণে ডাল উৎপাদনের কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
বারি’র বিজ্ঞানীরা এই পর্যন্ত ৭টি উচ্চ ফলনশীল মসুর ডালের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এছাড়াও খেসারীর ৩টি, মুগ ডালের ৬টি, ছোলার ৯টি, মাষকলাইয়ের ৩টি এবং ফেলন ডালের ১টি উচ্চ ফলনশীল জাত তৈরি করেছেন। এই জাতগুলোর উৎপাদন প্রায় ১.৫ থেকে ২ টন প্রতি হেক্টর, যেখানে আমিষের পরিমাণও ২০-৩০ শতাংশ। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, ডালে প্রোটিন বা আমিষের পরিমাণ গোশতের পরেই সবচেয়ে বেশি। এর ফলে, ডাল দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত মানুষের জন্য একটি সস্তা প্রোটিন উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়, যা তাদের আমিষের চাহিদা পূরণের সহায়ক।
বরিশাল অঞ্চলে চলতি রবি মৌসুমে প্রায় সোয়া ২ লাখ হেক্টর মুগ ডাল, ৭৫ হাজার হেক্টর খেসারী, ৫ হাজার হেক্টর মুসুর সহ আরও প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ডাল আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে খেসারী ডালের আবাদ হয়েছে আমন ধানের সাথী ফসল হিসেবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট ২৫ লাখ টন ডালের চাহিদার বিপরীতে মোট উৎপাদন মাত্র ১১ লাখ টন। যদিও চলতি রবি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টন ডাল জাতীয় ফসল উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে, তার প্রায় অর্ধেকই উৎপাদিত হচ্ছে বরিশালসহ উপকূলীয় অঞ্চলে। তবে, এখনও দেশের ডালের বৃহৎ চাহিদা আমদানির ওপর নির্ভরশীল, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। সুতরাং, ডাল জাতীয় ফসল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন আরও নিবিড় কর্মসূচি ও প্রযুক্তি ব্যবহারের।
মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম