শিরোনাম

দেশের নামিদামি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি বরিশালের পণ্য যাচ্ছে বিদেশে

Views: 32

বরিশাল অফিস :: লেখাপড়া করলেও চাকরি নিয়ে জীবনধারণ কখনোই ছিলোনা এমএ রশিদ আরিফের। চিন্তা ছিল নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে কাজ করবেন। যে চিন্তা সেই কাজ। ২০০৪ সালে নারিকেলের আইচা দিয়ে হাতেই শো-পিস বানানো শুরু করেন। নিজের বানানো শো-পিসের বাজার সৃষ্টি করতে দোকানে দোকানে ঘুরে বেড়ান। কিন্তু নিজেই সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না উৎপাদনের গতি নিয়ে। চিন্তা করলেন বিকল্প পণ্য উৎপাদনের। কিন্তু তখনও রশিদ আরিফের শুন্যহাত। তাই ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে শুরু করেন কাঠের কারুপণ্য তৈরি। আর তাতেই ভাগ্য সু-প্রসন্ন হলো সফল উদ্যোক্তা রশিদ আরিফের।

ঋণ করে শুরু করা সেই ব্যবসা থেকে এখন দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় কাঠের কারুপণ্যের কারখানার মালিক এমএ রশিদ আরিফ। তার দুইটি কারখানায় এখন তৈরি হচ্ছে লাখ লাখ পণ্য। বছরে দেড় কোটি টাকারও বেশি পণ্য তৈরির অর্ডার আসে দেশের নামিদামি ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠান থেকে। রশিদ আরিফের এক প্রতিষ্ঠান হাসিনা কুটির শিল্প। বরিশাল বিসিক শিল্প নগরীতে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। প্রতিদিন ভোর হতেই সেখানে কাঠ প্রক্রিয়াজাত করে মেশিনে তুলে দেওয়ার ব্যস্ততা শুরু হয়। সেখানে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করেন।

কারখানার ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন মাহি বলেন, আমাদের পণ্যগুলো সাধারণত মেহগনি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। ভালো গাছ কিনে তা স্ব-মিল দিয়ে পাতলা কাঠ করে কারখানায় নিয়ে এসে শুকিয়ে তোলা হয় নকশার মেশিনে। নকশা হয়ে গেলে পাঠানো হয় বার্নিশে। এরপর সেগুলো আবারও পরীক্ষা করে প্যাকেটজাতের পর ক্রেতার হাতে হস্তান্তর করা হয়। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কারখানায় কাজ চলে।

শুধু দেশেই নয়; দেশের বাহিরেও যাচ্ছে হাসিনা কুটির শিল্পের পণ্য। কারখানার আরেক কর্মী আহসান হাবিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পণ্য নিয়ে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া দেশের নামিদামি ব্র্যান্ড যেমন আড়ং চুক্তিবদ্ধভাবে পণ্য নিচ্ছে। বাৎসরিক হিসেবে পণ্যের অর্ডারের তারতম্য হলেও গড়ে প্রতি বছর লাখের অধিক পণ্য উৎপাদন হয়। এখানে গ্লাসের ঢাকনা, দেয়ালচিত্র, টিস্যুবক্স, শিশুদের পাজেল, ফুলদানি, ভিজিটিং কার্ডদানিসহ সৌখিন মানুষের ঘর ও অফিসের সৌন্দর্যের সবকিছুই তৈরি হয়।

এমএ রশিদ আরিফ বলেন, আমি কখনো ভাবিনি কারখানার মালিক হতে পারব। যদিও আমার আব্বা কুটির শিল্পের সাথে বহু আগে থেকেই জড়িত। তার কাজ দেখে আমি নিজেও অনুপ্রেরণা পাই। এরপর যখন নারিকেলের আইচা দিয়ে কারুপণ্য তৈরি শুরু করি তখন হাত শুন্য ছিল। সেটি জনপ্রিয় হওয়ার পরে ব্যবসার ধরণ বদলে একজন শ্রমিক নিয়ে কাঠের কাজ শুরু করি। তিনি আরও বলেন, প্রথমে আমার বাসায় এবং পরবর্তীতে চাঁনমারি এলাকার একটি কক্ষে কাজ করতাম। পর্যায়ক্রমে মানুষের মধ্যে কাঠের পণ্যের চাহিদা বাড়ায় বিসিকে কারখানা শুরু করি। এখন চাঁনমারি ও বিসিকে দুইটি কারখানা চালু রয়েছে। যেখানে প্রতিমাসে প্রায় ১২ লাখ টাকার পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে।

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে সফল এ ব্যবসায়ী বলেন, ব্যবসার অনেক সুযোগ রয়েছে। তবে উদ্যোক্তাকে অবশ্যই নতুন নতুন আইডিয়া জেনারেট করে ব্যবসায় নামতে হবে। বিদেশি মানহীন পণ্য কারুপণ্যের সবচেয়ে বড় বাঁধা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বিদেশি মানহীন পণ্য এখন বাজার দখল করে নিয়েছে। তারপরেও আমরা ভালোমানের পণ্য দিয়ে ব্যবসায় টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। সরকার যদি বাজার ব্যবস্থার প্রতি নজর দিতো তাহলে দেশীয় উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলো আরো প্রসারিত হতো।

বিসিক বরিশাল জেলা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, কুটির শিল্প নিয়ে বেশ ভালো কাজ করছে হাসিনা কুটির শিল্প। প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন করে ইতোমধ্যে নিজের পণ্যের বাজার সৃষ্টি করেছে। আমরাও চাই এভাবে সবগুলো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে যাবে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *