পটুয়াখালীর বাউফলের কালাইয়া হাট, দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম ধানের বাজারে, আমন ধানের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দামে বড় ধরনের পতন ঘটেছে। এতে করে কৃষকরা চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। এই হাটে সপ্তাহের প্রতি সোমবার ধান কেনাবেচা হয়।
স্থানীয় কৃষক আলমগীর গাজী (৬৮) বলেন, “২৫ মণ ধান এনেছিলাম, কিন্তু মাত্র ১,৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে হয়েছে। পাওনাদারের দেনা শোধ করার পর সংসারের খরচ কীভাবে চালাবো বুঝতে পারছি না।”
উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে বাউফলের চরাঞ্চলে ৩৪ হাজার ৬৫১ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে এবং ফলন ভালো হয়েছে। তবে বাজারে দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।
এবার স্থানীয় মোটা জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ১,৪০০ থেকে ১,৫০০ টাকা মণ দরে। ইরি জাতের দাম ১,২৫০-১,২৬০ টাকা, স্বর্ণমুসরী ১,৩০০ টাকা এবং সুগন্ধি কালিজিরা ধান ১,৬০০-১,৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও এই দাম ১৫০-২০০ টাকা বেশি ছিল।
দাশপাড়া গ্রামের কৃষক জহিরুল ইসলাম বলেন, “জমি চাষ, বীজ, সার এবং শ্রমিক খরচ বাবদ যে খরচ হয়েছে, তা তুলতেই হিমশিম খাচ্ছি। বাজারদর এত কম হলে কৃষি কাজে কেউ উৎসাহিত হবে না।”
হাটে ধান বিক্রি করতে এসে দর কম থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন ধানদী গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী। তিনি জানান, “আমন ধানই আমাদের প্রধান আয়ের উৎস। কিন্তু বর্তমানে বাজারদর এত কম যে সংসার চালানোও কঠিন হয়ে পড়েছে।”
এদিকে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কমল গোপাল দে জানান, সরকার প্রতি মণ ধানের দাম ১,৩২০ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ২,৩০০ টন ধান সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ৩০০ কৃষক আবেদন করলেও তাদের কাছ থেকে কোনো ধান সংগ্রহ শুরু হয়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিলন বলেন, “চরাঞ্চলে আমন ধানের ভর মৌসুম চলছে। সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু হলে বাজারে ধানের দাম বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।”
ধানের মূল্য কমে যাওয়ায় পটুয়াখালীর কৃষকদের চোখেমুখে এখন শুধুই হতাশা। তারা চান, সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করুক।
মো: আল-আমিন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম