দেশের টেলিযোগাযোগ খাতকে কেন্দ্র করে বিটিআরসি নতুন একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে, যার নাম “ইনফ্রাস্ট্রাকচার শেয়ারিং গাইডলাইন”। এই নীতিমালার প্রভাব নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এটি টেলিযোগাযোগ খাতে একতরফা আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে।
নতুন গাইডলাইন অনুসারে মোবাইল অপারেটরদের নিজস্ব ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক নির্মাণ ও ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। এর ফলে মোবাইল অপারেটরদের হাতে ইন্টারনেটের পুরো বাজার চলে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে দেশে ইন্টারনেট সেবার দাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং দেশীয় আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
২০০৮ সালের আগেও দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে একটি মোবাইল অপারেটরের একক আধিপত্য ছিল। তখন সার্কিট ট্রান্সমিশন ও ব্যান্ডউইথ সরবরাহে প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল অর্থ গুণতে বাধ্য হতো। কিন্তু এনটিটিএন নীতিমালার আওতায় ফাইবার অ্যাট হোম ও সামিট কমিউনিকেশনসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর আবির্ভাবের পর সেবার দাম কমে আসে।
তবে নতুন গাইডলাইনের মাধ্যমে মোবাইল অপারেটরদের আরও ক্ষমতাশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে এবং টেলিযোগাযোগ খাতে অস্থিরতা বাড়বে।
বিটিআরসি গত ১৮ ডিসেম্বর এই গাইডলাইনের খসড়া প্রকাশ করে। এটি অনুমোদনের জন্য ২৯ ডিসেম্বর চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিদ্যমান এনটিটিএন নীতিমালার সামান্য সংশোধনই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু তা না করে নতুন গাইডলাইন তৈরির পেছনে কী উদ্দেশ্য, তা বোধগম্য নয়।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইমুম রেজা তালুকদার মনে করেন, বিদ্যমান নীতিমালা সংশোধন করলেই টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়ন সম্ভব হতো। অথচ নতুন গাইডলাইন প্রণয়ন শুধু অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।
টেলিযোগাযোগ খাত বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবিরের মতে, এই গাইডলাইন অনুমোদিত হলে গত ১৫ বছরের স্থিতিশীল পরিবেশ নষ্ট হবে। স্থানীয় আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা কঠিন হবে এবং মোবাইল অপারেটরদের একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে।
এছাড়া মোবাইল অপারেটরদের আরও ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে ইন্টারনেটের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক সেবাও বিঘ্নিত হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, তড়িঘড়ি করে এই গাইডলাইন অনুমোদন না করে বিদ্যমান নীতিমালার ওপর আরও কাজ করা উচিত। এতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো টিকতে পারবে এবং টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বজায় থাকবে।