শিরোনাম

নিয়তের কারণে আমলের নেকি বৃদ্ধি পায়: ইসলামের আলোকে নিয়তের মহত্ব

Views: 35

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক :: ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, মানুষের কর্মের মূল ভিত্তি হচ্ছে তার নিয়ত বা ইচ্ছা। কোনো কাজের পিছনে থাকা নিয়তই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয়। একজন মানুষ ভালো কাজ করার ইচ্ছা করলেও যদি কোনো কারণে সেই কাজটি করতে না পারে, তবুও তার নিয়তের জন্য সে আল্লাহর কাছে পুরস্কৃত হয়। এই বিষয়টি ইসলামের বিশেষ এক মহত্বের উদাহরণ, যেখানে নিয়তের বিশুদ্ধতা ও সদিচ্ছার কারণে মানুষ অনেক নেকি অর্জন করতে পারে।

হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে যে, হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা তার ফেরেশতাদের বলেন, আমার বান্দা যদি কোনো গুনাহের কাজ করার ইচ্ছা করে কিন্তু তা বাস্তবে না করে, তাহলে তার জন্য কোনো গুনাহ লেখা হবে না। বরং সে যদি আমার ভয়ে সেই কাজ থেকে বিরত থাকে, তাহলে তার জন্য একটি নেকি লেখা হবে। অপরদিকে, যদি কেউ কোনো ভালো কাজ করার ইচ্ছা করে কিন্তু তা করতে না পারে, তাহলেও তার জন্য একটি নেকি লেখা হয়। আর যদি সে সেই ভালো কাজটি করে, তাহলে তার জন্য ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত নেকি দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি)

এটি স্পষ্টভাবে বোঝায় যে, নিয়তের বিশুদ্ধতা ও আন্তরিকতার উপর ভিত্তি করে আল্লাহ মানুষকে পুরস্কৃত করেন। মানুষ যদি কোনো গুনাহের কাজ করার ইচ্ছা করেও আল্লাহর ভয় বা সংযমের কারণে তা না করে, তবে সে শুধু গুনাহ থেকে রেহাই পায় না, বরং নেকি অর্জন করে। এটি ইসলামের মহান দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা মানুষকে শুধু বাহ্যিক কর্মে সীমাবদ্ধ না থেকে আন্তরিকতাকে গুরুত্ব দেওয়ার শিক্ষা দেয়।

**সদকার নিয়তের উদাহরণ:**

রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি গল্পের মাধ্যমে নিয়তের গুরুত্বের কথা বলেছেন, যেখানে এক ব্যক্তি রাতে সদকা দেওয়ার ইচ্ছা করেছিল। সে অজান্তে এক অসতী নারীর হাতে সদকা দিয়ে দেয়। সকালে মানুষজন এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা শুরু করে যে, “গত রাতে এক অসতীকে সদকা দেওয়া হয়েছে।” এ কথা শুনে সে আল্লাহর প্রশংসা করে এবং বলে, “হে আল্লাহ! অসতীকে সদকা দেওয়ার ব্যাপারেও আপনারই প্রশংসা।” এরপর সে আবার সদকা দেওয়ার নিয়ত করে এবং এবার তা এক ধনী ব্যক্তির হাতে দিয়ে দেয়। পরের দিন লোকজন আবারও আলোচনা করে, “গত রাতে ধনীকে সদকা দেওয়া হয়েছে!” এরপরও সেই ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে এবং আবার সদকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। শেষবারে সে একজন চোরের হাতে সদকা দেয়, এবং পরের দিন আবারও লোকজন বলে, “গত রাতে চোরকে সদকা দেওয়া হয়েছে!” তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয় যে, তার সদকা কবুল হয়েছে। সম্ভবত তার সদকার কারণে অসতী নারী অন্যায় থেকে ফিরে আসবে, ধনী ব্যক্তি তার সম্পদ ব্যয় করার গুরুত্ব বুঝবে, আর চোর তার চুরির পথ থেকে সরে আসবে। (মুসলিম, হাদিস: ২,২৫২)

এই উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, সদকা বা অন্য কোনো ভালো কাজের পিছনে নিয়ত থাকলে আল্লাহ তা কবুল করেন, এমনকি সেই সদকার প্রকৃত প্রাপক সম্পর্কে ভুল হলেও। আল্লাহ মানুষের অন্তরের অবস্থার উপর ভিত্তি করে তার পুরস্কার নির্ধারণ করেন, যা কর্মের বাহ্যিক ফলাফল থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

**নিয়তের বিশুদ্ধতা ও আল্লাহর পথে ইচ্ছা:**

নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সততার সঙ্গে আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার ইচ্ছা করবে, আল্লাহ তাকে সেই মর্যাদা দান করবেন, যদিও সে বিছানায় মৃত্যুবরণ করে। (মুসলিম, হাদিস: ৪,৮২৪) অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল লাভ করবে, যদিও সে বাস্তবিকভাবে সেই কাজ সম্পাদন করতে না পারে।

এছাড়াও, হাদিসে উল্লেখ আছে যে, যদি কেউ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার ইচ্ছা করে কিন্তু ঘুম তাকে ঘিরে ফেলে এবং সে উঠতে না পারে, তাহলেও তার জন্য তাহাজ্জুদের নেকি লেখা হয়। আর তার ঘুমকে আল্লাহ সদকাহ হিসেবে গণ্য করেন। (ইমাম নাসায়ি আস-সুনান, হাদিস: ১,৭৮৭)

ইসলামে নিয়ত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা মানুষের আমলকে মহৎ করে তোলে। আল্লাহ তাআলা মানুষের বাহ্যিক কর্মের চেয়ে অন্তরের বিশুদ্ধতাকে বেশি প্রাধান্য দেন। তাই আমাদের উচিত সব সময় নিয়ত বিশুদ্ধ রাখা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ভালো কাজ করা। আমাদের কর্মের উদ্দেশ্য যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়, তবে আমরা অবশ্যই সেই কাজের জন্য পুরস্কৃত হব, এমনকি তা বাস্তবায়ন করতে না পারলেও।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *