পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন নদনদীতে ইলিশসহ সব রকমের মাছ ধরা বন্ধ ছিল। টানা ৬০ দিন পর ১ মে থেকে আবারও নদীতে মাছ ধরতে নামেন জেলেরা। তবে নদীতে নেমেই হতাশ তারা। জালে প্রত্যাশিত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। নদী থেকে ইলিশ যেন উধাও হয়ে গেছে।
শুধু ইলিশ নয়, অন্য মাছেরও দেখ পাচ্ছেন না জেলেরা। যে অল্প কিছু ইলিশ ধরা পড়ছে, সেগুলো চড়া দামে বিক্রি করেও জ্বালানি খরচ ওঠাতে পারছেন না জেলেরা। আবার চড়া দামের কারণে নিম্ন-আয়ের মানুষ ইলিশের ধারেকাছে যেতে পারছেন না। ঘাটে আড়াইশো থেকে তিনশ গ্রামের হালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ থেকে ২ হাজার টাকায়।
আলিপুর, মহিপুর ঘাটে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
শনিবার (১১ মে) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার ছোট বিগাই যাওয়ার পথে পায়রা নদীতে এই প্রতিবেদকের দেখা হয় একদল জেলের সঙ্গে। পায়রা নদীতে মাছ ধরার বিষয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে। নৌকার মালিক মো. জব্বার ফকির জানান, ৭ মে থেকে চার দিন নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন তারা। এক ট্রলারে ১১ জন জেলে চার দিনে মোট ২৬ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে পেরেছেন। এর মধ্যে খাবার ও নৌকার জ্বালানির জন্য ১৮ হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট ৮ হাজার টাকা দিয়ে নৌকা, জাল ও ছয়জন মাঝিমাল্লার ৫ দিনের বেতন দিতে হবে।
জেলে নাসির বলেন, ‘মাছ ধরার পর যে টাকা পাই, তা দিয়ে কারোরই সংসার চলে না। এ মুহূর্তে নদীতে গিয়ে আমাদের পোষায় না। তারপরও ইলিশের আশায় এবং রোজগারের আশায় নদীতে যাই।’
জেলে দুলাল বলেন, ‘গত রাতে যে মাছ ধরেছি, ঘাটে এনে সেগুলো নিলামে বিক্রি করেছি ৫ হাজার টাকা। দিনের বেলায় যেগুলো ধরেছি, সেগুলো ৪ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুইবার নদীতে গিয়ে সারে ৩ হাজার টাকার জ্বালানি পুড়িয়েছি। তাই মাছ কম পেলে ঘাটে এসে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।’
মহিপুর মৎস্য আরত এর ম্যানেজার বলেন, ‘অতীতে এ ঘাটে ঘণ্টায় ৪০-৫০ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি হতো। এখন ইলিশই নেই।’ ২০টি ট্রলারে তারা প্রায় ৫০ লাখ টাকার মতো দাদন দিয়েছিলেন। পুরো দিনে চারটি ট্রলার এসে মাত্র ৩০ হাজার টাকার ইলিশ নিলামে বিক্রি করেছে।
আলিপুর মৎস্য আরত এর ব্যবসায়ী আনোয়ার বলেন, ‘মাছ কম, তাই দাম অনেক বেশি। সাধারণ আয়ের কোন মানুষের পক্ষে এখন ইলিশ খাওয়া সম্ভব না। নদীর ঘাটেই ২৫০ গ্রাম ওজনের হালি ইলিশ হাজার টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।’
আরো পড়ুন : গলাচিপায় জেলেদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরণ
মৎস্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ। বার্ষিক উৎপাদন প্রায় তিন লাখ ৪৬ হাজার টন। আর জিডিপিতে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় ১ শতাংশ। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা মিলিয়ে প্রায় ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় ইলিশ মাছ সবচেয়ে বেশি ডিম ছাড়ে। এর বাইরের উপকূলের অন্যান্য নদীগুলোতেও ইলিশ ডিম ছাড়ে।
সরকার ছয়টি জেলার—ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর—মেঘনা নদীর অববাহিকা, তেঁতুলিয়া নদী, আন্ধারমানিক নদী, পদ্মা ও কালাবদর নদীর ৪৩২ কিলোমিটার এলাকার ছয়টি এলাকা ইলিশ অভয়াশ্রম ঘোষণা করে। এর মধ্যে পাঁচটি অভয়াশ্রমে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস সব ধরনের প্রকার মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।