মো:আল-আমিন, পটুয়াখালী: ডাবল ডেকার লঞ্চের হুইসল, বাস-ট্রাকের হর্ন, কাছের সড়কের মানুষের কোলাহল, মাইকের শব্দ ওদের আস্তানা ভাঙতে পারেনি।
প্রায় ৩৭ বছর ধরে এলাকার কয়েকটি গাছের মগডালে বসবাস করছে একদল সাদা বক। একসময় এখানে ছিল শুধুই বকের আনাগোনা আর ঘরবসতি। প্রায় সাত বছর ধরে তাদের পাশে থাকছে একঝাঁক পানকৌড়ি।
সাদা আর কালো দুই বিপরীত বর্ণের পাখিদের এক নয়নাভিরাম মেলা যেন বসেছে।
দুই ধরনের পাখির এই মিলিত আখড়া পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নুরাইনপুর বাজারে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ প্রায় ৩৭ বছর আগে বাজারের লাগোয়া নুরাইনপুর মসজিদের পূর্ব পাশে পাটনিবাড়িতে আশ্রয় নেয় কিছু বক পাখি। তখন থেকে বর্ষা মৌসুম এলেই পাটনিবাড়ির গাছগুলো তাদের দখলে চলে যেত।
স্থানীয়রা জানায়, পাটনিবাড়িতে বিভিন্ন সময়ে কয়েক প্রজাতির বক দেখা গেছে। তবে বড় সাদা বকের সংখ্যাই বেশি। শুরুর দিকে বাজারের পূর্ব পাশে পাটনিবাড়ির গাছগুলোতেই বকদের বসতি ছিল। পরে একসময় পাটনিবাড়ির গাছ কেটে ফেলায় লাগোয়া মাওলানা মো. বশির খানের বাড়ির গাছে আস্তানা গেড়েছে বক আর পানকৌড়িগুলো।
ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখে আর তাদের কলরবে মুগ্ধ হয় পথিক। দিনের বিভিন্ন সময়ে দেখা যায় ধবধবে সাদা বক ও মিশকালো পানকৌড়িদের ওড়াউড়ি। মৌসুম অনুযায়ী দেখা যায় তাদের বাসা বানানো বা ছানার মুখে খাবার তুলে দেওয়ার দৃশ্য। বশির মাওলানার বাড়ির আম, মান্দার, সুপারি, মেহগনি, চাম্বল, রেইন ট্রিসহ প্রায় ১৫টি গাছে বক আর পানকৌড়ির বাসা।
মো. বশির জানান, ছয় প্রজাতির বক থাকে তাঁর বাড়ির গাছগুলোতে। লতাপাতা আর ডালপালা দিয়ে বাসা বানায় তারা। বকেরা এই আবাসে থাকে বছরের প্রায় ৯ মাস। চৈত্র শেষে বৃষ্টিতে মাঠ, নালা, খালবিলে পানি জমতে শুরু করলে ওরা চলে আসে এই বাড়িতে। হেমন্তকালের দিকে পানি শুকিয়ে এলে অন্যত্র চলে যায়। মাঝে প্রজনন মৌসুমে জন্ম নেয় অনেক ছানা।
স্থানীয়রা জানায়, সংখ্যায় বেড়ে যাওয়ায় পাখিগুলো এখন ছড়িয়ে পড়েছে পাশের আরো কয়েকটি বাড়ির গাছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. ফুহাদ বিশ্বাস বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা দেখে আসছি বকগুলো ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আসে। আবার অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে চলে যায়। প্রতি বছর তাদের সংখ্যা বাড়ছে। কয়েক বছর ধরে পানকৌড়ি এসে আরো আর্কষণ বাড়িয়ে দিয়েছে।’
পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক ও পাখি পর্যবেক্ষক পীযুষ কান্তি হরি বলেন, ‘বক সাধারণত জলাশয়ের কাছাকাছি বড় গাছের ডালে কলোনি গড়ে তোলে। মানুষ উপদ্রব না করলে এ রকম দীর্ঘ সময় একই কলোনিতে থাকতে পারে তারা। বক ও পানকৌড়ি প্রায় একই স্বভাবের। উভয়েই একই ধরনের জলাশয় থেকে ছোট মাছ, ব্যাঙ ও কীটপতঙ্গ আহার করে। তাই কখনো কখনো পাশাপাশি এক জায়গায় দল বেঁধে বাস করে।’