বরিশাল অফিস :: পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলায় জাহাজ শিল্প নানা সঙ্কটে পড়েছে। এই শিল্পওকে ঘিরে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ না পেয়ে এখন পেশা পাল্টাতে শুরু করেছেন। উপজেলাটি মূলত শিল্পসমৃদ্ধ একটি এলাকা। এখানে কৃষিপণ্যের উৎপাদনের পাশাপাশি কাঠ ও জাহাজ শিল্পের ব্যাপক খ্যাতি রয়েছে। শুধু এই এলাকার মানুষই নন, জাহাজ শিল্পকে ঘিরে উপজেলার বাইরে খুলনা, রাজবাড়ী, মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করছেন।
স্টিলের তৈরি লঞ্চ, ট্রলার ও কার্গো তৈরির লক্ষ্যে উপজেলার স্বরূপকাঠি সদর, সোহাগদল, সুটিয়াকাঠি, তারাবুনিয়া, নাওয়ারা, কালীবাড়ি, বরছাকাঠি, ডুবিরহাট ও বালিহারিতে ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক ডকইয়ার্ড গড়ে উঠেছে। জানা গেছে, নানা প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা এসব ডকইয়ার্ডে বিভিন্ন পেশায় প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক কর্মরত আছেন। এদের প্রত্যেকের দৈনিক মজুরি ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ৯০০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া ওভারটাইম নিয়েও কাজ করেন অনেক শ্রমিক।
আরো জানা গেছে, বর্তমানে নৌযান নির্মাণের পেইন্ট, ঝালাইকাঠি ও রংসহ নানা ধরনের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় নৌযান তৈরির ব্যয়ও বহুগুণ বেড়ে গেছে। আর এ কারণে ডকইয়ার্ডগুলোতে নতুন নৌযান নির্মাণ কমে গেছে। শুধু পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণেই নয়, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে সড়কপথে পণ্য পরিবহন বেড়ে গেছে। এ কারণে ট্রাকের কাঠামোসহ পরিবহনের নৌযান তৈরি কমে গেছে বলে অনেকে ধারণা করছেন। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে এ শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকদের আয়-রোজগারের ওপর।
হাওলাদার ডকইয়ার্ডের কন্ট্রাক্টর জাহাঙ্গীর হাওলাদার বলেন, জাহাজ তৈরির জন্য যে পেইন্টসহ অন্যান্য কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় ইদানীং জাহাজ নির্মাণ বা মেরামতে মালিকদের আগ্রহ কমে গেছে। আগের ৮৫ থেকে ৯৫ হাজার টাকার প্রতি টন পেইন্ট এখন এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় কিনতে হয়। শুধু ডকইয়ার্ডেই নয়, এ শিল্পকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, হার্ডওয়্যার, রং ও যন্ত্রপাতির দোকান গড়ে উঠেছে। সেখানেও বহু শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। তাদের আয়ও কমে গেছে।
ফরাজি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাসুম ফরাজি জানান, আগে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার রং বিক্রি হতো। বর্তমানে জাহাজ নির্মাণ কমে যাওয়ায় মাসে ২০ লাখ টাকাও বিক্রি করতে পারি না।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, জাহাজ নির্মাণের এ শিল্পের প্রসারতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোক্তারা আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এলে এ শিল্প থেকে কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যেত। আর এর মাধ্যমে খুলে যেতে পারে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দ্বার।
নেছারাবাদ বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মোজাহিদুল ইসলাম আসাদ বলেন, প্রায় ৪০ বছর স্থানীয় পর্যায়ের কিছু ব্যবসায়ীরা নিজেদের উদ্যোগে এই ব্যবসা চালু করেছেন। এর ফলে এখানে বহু লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সরকার এই সম্ভাবনাকে বিবেচনা করে কিভাবে এর পরিসর আরো বাড়ানো যায় সে বিষয়ে পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত।
এ ব্যাপারে নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মনিরুজ্জামান জানান, ব্যবসার পরিধি বাড়ানো ও সরকারি সুযোগ-সুবিধাসহ ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা উপজেলা প্রশাসন সবসময় করে আসছে।