মো: আল-আমিন (পটুয়াখালী): পটুয়াখালীতে এ বছর আবাদ কম হলেও কাঙ্ক্ষিত দামে আমন ধান বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষক। গত বছরের তুলনায় এ বছর মণ প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দামে আমন ধান বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন তারা। জেলার বিভিন্ন উপজেলার ধানের হাট-বাজার পরিদর্শন করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গত কয়েক বছর ধরে জেলার আমন চাষীরা ধানের কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছিলেন না। মৌসুমে বাজারে ধানের দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচও ঘরে তুলতে পারেননি অনেকে। তবে এবারের চিত্র আলাদা। গত কয়েক বছরের তুলনায় মণ প্রতি আমন ধান ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এরকম দামে ধান বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষকেরা।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী বাজারে গিয়ে দেখা গেছে স্থানীয় কৃষকরা ধান ডিজিটাল স্কেলে মেপে বস্তাভর্তি করছেন। আবার বিক্রির জন্য অনেক কৃষক ধানের বস্তা রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে রেখে দিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা এ ধান কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যান।
ধানখালী গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘গত বছর আমন ধান ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে। তাতে আমাদের উৎপাদন খরচ ওঠেনি। প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচ কমপক্ষে ৮০০ টাকা। তবে এবারের অবস্থা ভালো। আমার ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করতে পারছি।’
তিনি জানান, এ বছর ৬ একর জমিতে তিনি ধান উৎপাদন করেছেন।
একই গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমি ৫ একর জমিতে আমন উৎপাদন করেছি। পরিবারের সারা বছরের জন্য প্রয়োজনীয় চাল রাখার পরও লক্ষাধিক টাকার ধান বিক্রি করতে পেরেছি।’
বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ গ্রামের কৃষক মোতালেব খান জানান, আমন ধানের দাম এবার খুবই ভালো। এরকম দাম পেলে আমাদের লোকসানে থাকতে হবে না।
স্থানীয় বাজারে শুরু থেকেই আমন ধানের দাম ভালো ছিল বলে জানান কুষ্টিয়া থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী আবুল হাসেম।
তিনি জানান গত বছর ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে আমন ধান বিক্রি হয়েছে। তবে এ বছর ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকায় ধান কিনতে হচ্ছে।
এখান থেকে ধান কিনে কুষ্টিয়ার রাইস মিলগুলোতে সরবরাহ করা হয় এবং সেখান থেকে উৎপাদিত চাল দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়, জানান হাসেম।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হৃদয়েশ্বর দত্ত জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও গেল বছর কয়েক দফা বন্যার কারণে ধানের আবাদ কম হওয়ায় বাজারে দাম বেড়েছে।
তিনি আরো বলেন, কৃষকরা এ বছর আমন ধান বিক্রি নিয়ে খুশি। গত কয়েক বছরে ধানের দাম না পাওয়ার কারণে কৃষকদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করছিল। কিন্তু এবার কৃষকদের সেই হতাশা কেটে গেছে।
এ বছর জেলায় মোট ২ দশমিক ০২ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে এবং এতে ৪ দশমিক ৩৭ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।