বরিশাল অফিস :: মনোনয়নপত্র জমার আগেই নির্বাচনী হাওয়ায় সরব পটুয়াখালী শহর। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ না কাটতেই স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে পৌরশহর। রাস্তা, অফিসসহ বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণসংযোগের পাশাপাশি উঠান বৈঠক ও মিছিলও চলছে। তফসিল ঘোষণার আগে ছয়জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও মাঠে সক্রিয় বর্তমান ও সাবেক দুই মেয়রসহ তিনজন। এ ছাড়া ৯টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ৩টি ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর পদের সম্ভাব্য অর্ধশতাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।
জানা গেছে, পটুয়াখালী পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি। সেবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচনে বিজয়ী হন বর্তমান মেয়র মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর হেরে যান। ওই সময়ের মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সফিকুল ইসলাম দলীয় প্রার্থী কাজী আলমগীরকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গিয়েছিলেন। তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০১১ সালে।
চলতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত বর্তমান ও সাবেক দুজন মেয়র ছাড়াও মাঠে সরব ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক জেলা বাস ও মিনি-বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. রিয়াজউদ্দিন মৃধা, পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পানজা বিড়ি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খান, পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ও পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনায়েত হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মো. ইকবাল হোসেন ভুঁইয়া।
নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকার সিদ্ধান্তে তিনজন ছাড়া সবাই নীরব হয়ে যান। সাবেক মেয়র সফিকুল ইসলাম ও বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ ছাড়াও মো. এনায়েত হোসেন এখনও মাঠে সরব। তারা গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, মতবিনিময় সভা করছেন। তাদের পক্ষে চলছে মিটিং-মিছিল।
১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত পটুয়াখালী পৌরসভা ১৯৮৯ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। ১৩২ বছরের এই শহরে ধাপে ধাপে উন্নয়ন হলেও গত ৫ বছরের কিছু উন্নয়ন ছিল চোখে পড়ার মতো। এর মধ্যে শহরের প্রবেশপথ কালিকাপুর চৌরাস্তা থেকে সার্কিট হাউস মোড় পর্যন্ত মূল সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, নান্দনিক সেলফি রোড-যেটি কাশ্মীরের ছবি বলে চালিয়েছিল ভারত, দুটি দৃষ্টিনন্দন লেক আধুনিকায়ন শহরের চিত্রকে বদলে দিয়েছে। তেমনি পুরান শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা এখনও বেহাল থাকার চিত্রও রয়েছে।
বর্তমান মেয়র মো. মহিউদ্দিন আহমেদের দাবি গত ৫ বছরে পটুয়াখালী শহরে যে উন্নয়ন হয়েছে তা বিগত ১৩০ বছরের ইতিহাসে হয়নি। সারা দেশে পটুয়াখালী এখন একটি মডেল শহর। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন উন্নয়নের পাশাপাশি নগর স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছি।’
আর সাবেক মেয়র ডা. সফিকুল ইসলামের দাবি বর্তমান শহরের যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তার বেশিরভাগ বরাদ্দ তার সময়ের। বর্তমান মেয়রের মেয়াদে সুষম উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়ন হয়েছে একটি নির্দিষ্ট এলাকায়। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে সুষম উন্নয়ন করব।’
সম্প্রতি সরকারি জমিতে বসবাসকারী শহরের কিছু মানুষকে বাস্তুচ্যুত হওয়ার ব্যাপারে বর্তমান মেয়রের দাবি এটা জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে হয়েছে। এখানে তার করার কিছু ছিল না, তবুও তাদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আর সাবেক মেয়রের দাবি তার সময়ে এই শহরে কাউকে বাস্তুচ্যুত করা হয়নি, তিনি নির্বাচিত হলে তাদেরকে পুনরায় পুনর্বাসিত করবেন। উভয়ই নিজ নিজ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
পিছিয়ে নেই এনায়েত হোসেনও। তিনিও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। এনায়েত হোসেন বলেন, ‘পটুয়াখালীকে একটি সন্ত্রাস ও দুর্নীতি মুক্ত পৌরসভা হিসেবে গড়তে চাই। আমার প্রত্যাশা জনগণ এবারের নির্বাচনে ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবে বলে প্রত্যাশা।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে প্রার্থীকে সমর্থন না জানানোর সিদ্ধান্ত নিলেও জেলা আওয়ামী লীগ ডা. সফিকুল ইসলামকে সমর্থন জানানোর ঘোষণা দিয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জরুরি সভা করে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে কালক্ষেপণ না করে বিগত নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে সফিকুল ইসলামকে মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে সমর্থন জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
বসে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। তাদের ভোট ও দোয়া চেয়ে পোস্টার, ব্যানারে ছেয়ে গেছে শহর। প্রতিদিন চলছে গণসংযোগ। পিছিয়ে নেই নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। তারাও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করছেন।
বর্তমানে পটুয়াখালী শহরের লোকসংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী ভোটার ৫০ হাজার ৬৯৯। এর মধ্যে পুরুষ ২৩ হাজার ৯৪৭ আর নারী ভোটার ২৬ হাজার ৭৫০ জন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ইভিএমের ভোটগ্রহণ আগামী ৯ মার্চ। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি। বাছাই-১৫ ফেব্রুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন ২২ ফেব্রুয়ারি। আর ২৩ ফেব্রুয়ারি হবে প্রতীক বরাদ্দ।
রিটার্নিং কর্মকর্তা খান আবি শাহানুর খান বলেন, ‘এরই মধ্যে তফসিল ঘোষণা হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনী প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে। যারা রঙিন পোস্টার ও ব্যানার টানিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন, সেসব অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করছি।’