পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালী রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা বা ইপিজেডের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা
স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে শনিবার পটুয়াখালী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অধিগ্রহণ করা জমির মালিকেরা মাটি কাটার জন্য আসা খননযন্ত্র সরিয়ে দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। এ সময় তাঁরা বিক্ষোভ করে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধের দাবি জানান।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পচাকোড়ালিয়া গ্রামে হচ্ছে পটুয়াখালী ইপিজেড। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কাজে বাধা দেওয়ার পর থেকে পচাকোড়ালিয়া গ্রামের নারী-পুরুষ ওই এলাকায় অবস্থা নেন। বিকেল পাঁচটায় ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, গ্রামের লোকজন ‘আগে টাকা, পরে কাজ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
এ সময় স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাটি কাটার যন্ত্র নিয়ে শ্রমিকেরা কাজে আসেন। মাটি কেটে বাঁধ দিয়ে বালু ফেলে ভরাট করার কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল সকালে। এ অবস্থায় জমির মালিকেরা একত্র হয়ে ক্ষতিপূরণের পাওয়ার আগে ইপিজেডে কাজ করতে দেবেন না বলে জানান।
গ্রামের মো. নুরুল ইসলাম জানান, ইপিজেডের কারণে তাঁর চার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখন শুধু বসতঘরটি আছে। অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা না পেলে এখন তাঁরা কীভাবে বাঁচবেন?
আবুল বাশার খান জানান, তাঁর ১ একর ৭ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখনো একটি টাকাও তিনি পাননি।
বেল্লাল শরীফ জানান, তাঁর ৩ একর ২৬ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তাঁদের জমির মূল্য ধরা হয়েছে ২০২১ সালের হিসাবে। এখন ২০২৪ সাল। এখন জমির মূল্য বেশি হবে; কিন্তু কোনো টাকাই তাঁরা পাচ্ছেন না।
আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির বলেন, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে ইপিজেড হচ্ছে। এর মাধ্যমে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের পর মালিকেরা টাকা পেতে দেরি হওয়ায় ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। তাঁরা চান ক্ষতিপূরণ দ্রুত পরিশোধ করা হোক।
এদিকে ইপিজেডের কাজ বন্ধ হওয়ার পর বিকেল পাঁচটার দিকে প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান।
তিনি জানান, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ৯ মাস আগে এই জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৬২ কোটি টাকা জেলা প্রশাসকের অনুকূলে হস্তান্তর করেছে। জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ পেতে কেন দেরি হচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে আজ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবেন।
জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম জানান, আসলে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় জনবলসংকটের কারণে অধিগ্রহণ করা জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে দেরি হচ্ছে। তবে টাকা পরিশোধ যাতে দ্রুত হয় এ ব্যাপারে তাঁরা কাজ করছেন। স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পচাকোড়ালিয়া গ্রামে ইপিজেড এলাকাটি ৪১০ দশমিক ৭৮ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হবে। ৩০৬টি শিল্প প্লট হবে এখানে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা। এখানে প্রায় এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে জানান প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।