শিরোনাম

পটুয়াখালীতে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার আগে ক্রেতাদের ভিড়

Views: 28

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: ইলিশের প্রজনন সুরক্ষার জন্য শনিবার (১২ অক্টোবর) রাত ১২টার পর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ইলিশ ধরার উপর সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা। এ খবরে পটুয়াখালীর মাছ বাজারগুলোতে ইলিশ কিনতে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শহরের আলীপুর, মহিপুর, কুয়াকাটা বাজারের পাশাপাশি সদর উপজেলার নিউ মার্কেট ও হেতালিয়া বাধঘাটসহ অন্যান্য বাজারগুলোতে ভোর থেকেই ক্রেতারা ইলিশ কেনার জন্য জড়ো হচ্ছেন। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করতে বাজারগুলোতে উপচে পড়া জনস্রোত দেখা যাচ্ছে।

আলীপুর মাছ বাজারে ভিড়:
পটুয়াখালীর অন্যতম প্রধান মাছ বাজার আলীপুরে সকাল থেকেই ইলিশ কেনার জন্য ভিড় জমেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত ইলিশের চাহিদা বরাবরই বেশি থাকে, তবে নিষেধাজ্ঞার আগে ক্রেতাদের ভিড় কয়েক গুণ বেড়েছে। এখানে ছোট থেকে বড়, সব সাইজের ইলিশই বিক্রি হচ্ছে। এক ক্রেতা, জসিম উদ্দিন, বলেন, “আগামী ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে, তাই আজই ইলিশ কিনে ফ্রিজে মজুত করে রাখছি। দাম কিছুটা বাড়লেও ইলিশ কিনতে পেরে খুশি।”

মহিপুর মাছ বাজারের চিত্র:
মহিপুর মাছ বাজারেও একই রকম ভিড় দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, “গত কয়েক দিন ধরে ইলিশের দাম একটু বেশি হলেও, নিষেধাজ্ঞার আগের দিন বিক্রির চাপ অনেক বেড়ে গেছে। সব সাইজের ইলিশই দ্রুত বিক্রি হচ্ছে।” এখানে ক্রেতারা ৪০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ বেশি কিনছেন, যা নিষেধাজ্ঞার সময় ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করা সহজ হবে।

কুয়াকাটা বাজারের অবস্থা:
কুয়াকাটা মাছ বাজারে পর্যটকদের ভিড়ও বেড়েছে। পর্যটকরা স্থানীয় বাজার থেকে ইলিশ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই শহর থেকে আসা অতিথিদের জন্য ইলিশ কিনে নেয়ার তাড়া নিয়ে বাজারে ভিড় জমিয়েছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী আকবর হোসেন বলেন, “ইলিশের দাম একটু বাড়লেও, ক্রেতাদের এতে কোনো আপত্তি নেই। তারা মনে করছেন, নিষেধাজ্ঞা থাকায় কিছুদিন ইলিশ পাওয়া যাবে না, তাই এখনই কিনে রাখা হচ্ছে।”

নিউ মার্কেট মাছ বাজারে ক্রেতাদের ভিড়:
পটুয়াখালীর নিউ মার্কেট এলাকায় মাছের দোকানগুলোতেও ভোর থেকেই ইলিশ কিনতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। এখানে ছোট ও মাঝারি আকারের ইলিশ বেশি বিক্রি হচ্ছে। এক ক্রেতা, নাসির উদ্দিন, বলেন, “নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ পাওয়া যাবে না, তাই আজই কিছু মাছ কিনে ফ্রিজে রাখছি। দাম কিছুটা বেশি হলেও এখনই কিনতে হচ্ছে।”

হেতালিয়া বাধঘাট বাজারের চিত্র:
হেতালিয়া বাধঘাট বাজারেও একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। সেখানে বড় ইলিশের চাহিদা বেশি, বিশেষ করে যারা বেশি মাছ সংরক্ষণ করতে চান, তারা বড় সাইজের ইলিশ কিনছেন। এক বিক্রেতা জানান, “দাম কিছুটা বেড়েছে, তবে ক্রেতারা নিষেধাজ্ঞার কথা মাথায় রেখে বেশি পরিমাণে ইলিশ কিনছেন।” বাজারে ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১২০০-১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ইলিশের দাম ও সরবরাহ:
বর্তমানে পটুয়াখালীর বিভিন্ন বাজারে ইলিশের দাম আকার ও মান অনুযায়ী ভিন্ন। ছোট আকারের ইলিশ ৭০০-৯০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, আর বড় আকারের ইলিশ ১২০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। বিক্রেতারা জানান, গত এক সপ্তাহে দাম কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে চাহিদা এতই বেশি যে ক্রেতারা কোনোভাবেই দাম নিয়ে আপত্তি করছেন না।

নিষেধাজ্ঞার কারণ ও প্রতিক্রিয়া:
সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবদুল মান্নান বলেন, “ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মাছের সুরক্ষার জন্য প্রতি বছরই এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এটি ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করবে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে বাজারগুলোতে কিছুদিন ইলিশের সরবরাহ বন্ধ থাকবে। তবে এর ফলে আগামীতে ইলিশের প্রাপ্যতা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।”

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামী ২২ দিন ইলিশ আহরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন এবং বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। তবে এ সময় ইলিশ মাছের অভাব মেটাতে অন্য মাছের চাহিদা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *