পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: বিরামহীন বৃষ্টি আর পূর্ণিমার প্রভাবে তেঁতুলিয়া নদীর পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল জমির বীজতলা পচে যাচ্ছে। জমির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। তারা নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নিষ্কাশনের টেকসই ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে স্থানীয় ও উপশি জাতের প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চর বেষ্টিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরকে ঘিরে বেড়িবাঁধের একটি মাত্র স্লুইসগেট। যা দিয়ে দুই-তিনটি বিলের পানি নিষ্কাশন হয় না। বিলের সমতল ভূমির তুলনায় স্লুইসগেট উঁচুতে থাকায় পানি উঠলে আর নামে না। কিংবা নামলে আর ওঠে না। এ কারণে ওই ইউনিয়নের শুধু চর মিয়াজান গ্রামেই পচে যাচ্ছে ৮ হেক্টর আমনের বীজতলা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকেরা বলেন, বিরামহীন বৃষ্টি আর পূর্ণিমার প্রভাবে তেঁতুলিয়া নদীর পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে চর মিয়াজানের শতাধিক কৃষকের আমনের বীজতলা পচে গেছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। ওইসব বীজতলা থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন উপায় না থাকায় এদের কেউ আবার নতুনভাবে বীজতলা তৈরির উদ্যোগ নিলেও চাষ মৌসুমে ২০-২৫ দিন পিছিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
কৃষক সাত্তার হাওলাদার জানান, বীজতলা তৈরির পরে বাজার থেকে ১০ কেজির প্রতি প্যাকেটে ১ হাজার ৫০ টাকা হিসাবে বিআর ১১জাতের বীজধান কিনে আনা হয়েছে। কিন্তু বীজ ছিটানোর কয়েকদিন পরই বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি উঠলে বীজতলা পচে যায়।
আরো পড়ুন : পটুয়াখালীতে ক্ষতিগ্রস্ত ২০৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কারে নেই উদ্যোগ
সেকান্দার রাড়ি, আব্দুস ছালাম হুজুর, কুদ্দুস মৃধা, লিটনসহ প্রায় সব কৃষকেরই একই দশা। নান্নু বাবুর্চি নামে অপর এক কৃষক বলেন, ২ মন মোটা ধানের বীজ পানিতে ভেসে গেছে তার।
বিলে পানি জমে থাকায় ঠিকঠাক অঙ্কুর আসলেও শিকড় ধরেনি মোকলেস চৌকিদারের বীজতলায়। বিলের পানি নামতে না নামতেই আবার বৃষ্টির কারণে ক্ষতির মুখে পড়ে তার বীজতলাও।
তিনি জানান, পুরো চরে একটা মাত্র স্লুইস গেটে পানি নেমে শেষ হয় না। পানিতে প্লাবিত থাকায় স্থানীয় সকল চাষিদের বীজধান নষ্ট হয়ে গেছে।
কৃষকেরা জানান, চর মিয়াজান কামাল মাস্টার বাড়ির কাছে যদি আরও একটি স্লুইস গেট বা কালভার্ট নির্মাণ করা হয় তাহলে আমন চাষে কৃষকরা ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পারবেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আনছার উদ্দিন বলেন, ‘ক্ষতি এড়াতে কৃষকদের কলার ভেলা, বাঁশের মাচা কিংবা ঘাস-লতাপাতা ব্যবহার করে ভাসমান বীজতলা তৈরির পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ২০-২৫ দিনের জন্য ব্যবহৃত এসব ভাসমান বীজতলা তৈরি করে নিম্ন এলাকায় অনায়াসে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। চর মিয়াজানে আমন চাষের প্রতিকূলতা তুলে ধরে স্লুইস গেট কিংবা কালভার্ট সম্পর্কে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হবে।’