পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর সাবিনা আক্তার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তালেবের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষক, কর্মচারী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, আবু তালেব ২০১২ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে এ বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, শিক্ষার্থী বেতন, উপবৃত্তি ও টিউশন ফিসহ নানা তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ, ল্যাপটপ, হোয়াইট বোর্ডসহ নানা উপকরণ আত্মাসৎ করেছেন।
তিনি গত ১২ বছরে বিভিন্ন তহবিলের ৩২ লাখ ২৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অর্ধ-বার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষার ফি বাবাদ ৯ লাখ টাকা, মার্কশিট, প্রশংসাপত্র ও প্রবেশপত্র, সার্টিফিকেট বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত ৮ লাখ টাকা, উপবৃত্তি বাবাদ ২ লাখ, উপবৃত্তির পিন কোড দিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে ২১ হাজার টাকা, ২০২৪ সালের ৮ম-৯ম শ্রেণী পর্যন্ত রেজিষ্ট্রেশন বাবদ ৮৭ হাজার ৫০০ শত টাকা, শিক্ষার্থী ভর্তি ফি বাবদ ৬-১০ শ্রেণী (২ বছরের) ২ লাখ টাকা, টিউশন ফি বাবদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
তিনি শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করে তার পক্ষের শিক্ষকদের সপ্তাহে ৯-১০ টি পিরিয়ড আর প্রতিপক্ষের শিক্ষককে ৩০-৩২ টি ক্লাস দিয়ে হয়রানি করেন।
তিনি বিদ্যালয়ের সকল ধরনের আয়ের টাকা নিজে গ্রহণ করে আত্মসাৎ করেন, শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল দেয়ার জন্য মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেন, শিক্ষার্থী ভতি বাবদ ৭৫০ থেকে ১ হাজার টাকা নেন, এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরনে দেড় হাজার টাকা করে অতিরিক্ত গ্রহন করেন আবার প্রবেশপত্র বিতরণকালে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৬০০ টাকা নেন।
গরিব, মেধাবী ও ক্লাসে উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে সরকার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দিয়ে থাকে কিন্তু এসব বিষয় বিবেচনায় না রেখে আর্থিক লেন-দেনের মাধ্যমে নিজের ইচ্ছামত উপবৃত্তি দিয়ে থাকেন। এছাড়াও, তিনি শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে অসৌজন্যমূলক (তুই-তুকারি) করেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের বি.এড ও উচ্চতর স্কেল দেয়ার জন্য মোটা অংকের ঘুষ দিতে বাধ্য করা হয় সহকারি শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছ থেকে উচ্চতর স্কেল করার জন্য ৫০ হাজার, বিলকিস নাহারের কাছ থেকে ৩৭ হাজার, আফরোজা বেগমের কাছ থেকে বি.এড স্কেল করাতে ৩০ হাজার, ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানার ইব্রাহিমের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নেন।
টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাকে নানাভাবে হয়রানী করা হয়। টাকা না দেয়ায় ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে সহকারি শিক্ষক অনিমেশ চন্দ্র সরকারের ১৫ দিনের বেতন কর্তন করা হয়।
তিনি ১০ বছরেও ম্যানেজিং কমিটির কোন সভা করেননি। রেজুলেশন খাতায় আলোচ্য বিষয় না লিখে শিক্ষক প্রতিনিধিদের অনেকগুলো স্বাক্ষর একসাথে দিতে বাধ্য করেন। শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন সীটে প্রতিমাসে স্বাক্ষর নেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষকের রক্তচক্ষুর রোষানলে ১২ মাসের স্বাক্ষর একসাথেই দিতে হয়। প্রধান শিক্ষক নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না, শ্রেণী কক্ষে পাঠদানে অংশগহন করেন না, শিক্ষক হাজিরা খাতায় একসাথে অনেকগুলো স্বাক্ষর ও অযৌতিক কারণ দর্শান।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আবু তালেব বলেন, কেউ অভিযোগ দিতেই পারে। যাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছে তারা তদন্ত করে দেখেন। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সদর উপজেলা নিবার্হী অফিসার ইফফাত আরা উর্মি বলেন, শিক্ষকদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।