শিরোনাম

পটুয়াখালীর উপকূলে বিষমুক্ত শুঁটকির কদর বাড়ছে

Views: 57

বরিশাল অফিস :: পটুয়াখালীর সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের লীলাভূমি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত প্রাকৃতিকভাবে দর্শনার্থীদের কাছে বিখ্যাত হলেও বেশকয়েক বছর ধরে আগন্তুকদের কাছে সুনাম কুড়াচ্ছে এই পর্যটন নগরীর বিষমুক্ত শুঁটকি। যা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে কুয়াকাটার শুঁটকি এখন অন্যতম।

ক্ষতিকারক কোনো মিশ্রন ছাড়াই শুধুমাত্র লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয় বিষমুক্ত শুঁটকি। সমুদ্রতীরে খোলা আকাশের নিচে কেবল রোদের আলো এবং বাতাসের সাহায্যে কাঁচা মাছ শুকিয়ে বিক্রি করা হয় দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের কাছে। শুঁটকিপ্রেমীরা উন্মুক্ত পরিবেশে প্রাকৃতিকভাবে শুকানো শুঁটকি কিনতে ছুটে আসছেন দূর-দুরান্ত থেকে। কাঁচা মাছ শুকিয়ে শুঁটকি উৎপাদনে নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় ক্রেতাদের চাহিদানুযায়ী সরবরাহ করতে পারছেন না দোকানিরা। তাই কুয়াকাটার শুঁটকির এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে স্থায়ী শুঁটকিপল্লী নির্মাণের দাবি উৎপাদনকারীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।

শুঁটকি উৎপাদনে সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে নির্দিষ্ট কোনো পল্লী না থাকায় গত কয়েক বছর ধরে শীত মৌসুমে কুয়াকাটা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট অস্থায়ীভাবে প্রক্রিয়াজাত করছেন উৎপাদনকারীরা। চলতি মৌসুমেও ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় লেবুর বনসহ সৈকতের কয়েকটি পয়েন্টে শুকানেরা হচ্ছে শুঁটকি। তবে কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই শুধুমাত্র লবণ মেখে সৈকতে বাঁশের মাচা বানিয়ে রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পর্যটকদের পছন্দের শুঁটকি মাছ। আর এ পল্লীতে দেখা মেলে পোয়া শুঁটকি, সোনাপাতা, মধুফাইস্যা, রূপচাঁদা, শাপলাপাতা, চাপিলা, ফাইস্যা, লইট্রা, চিংড়ি, ছুড়ি, হাঙ্গর, ভোল ও কোড়ালসহ অন্তত ৫০ প্রজাতির সুস্বাধু শুকানো মাছের। ফলে প্রতিনিয়ত শুঁটকি পল্লীতে পছন্দের শুঁটকি সংগ্রহে ভিড় জমান পর্যটকসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা।

খুলনা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক শাহাদত হোসেন জানান, আমরা শুঁটকি প্রেমী মানুষ, দেশের বিভিন্ন এলাকার শুঁটকি খেয়েছি। কিন্তু কুয়াকাটার শুঁটকির কথা শুনে এখানে এসেছি। ভ্রমণ শেষে বেশকিছু শুঁটকি নিয়েছি। এক কথায় অসাধারণ শুঁটকি, কারণ মেডিসিন ছাড়াই রোদে শুকানো হয়। এমনকি তেমন কোনো গন্ধও নেই।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক দম্পতি মিম-সামি বলেন, বহুদিন ধরে অফিস কলিগদের কাছে কুয়াকাটার শুঁটকির কথা শুনে শুনে কুয়াকাটায় এসেছি। এসে দেখলাম আসলেই প্রাকৃতিকভাবে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। তাই লইটট্টাসহ কয়েক ধরনের শুঁটকি কিনেছি। পরিবারের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনদের গিফট করবো।

লেম্বুর বন এলাকার শুঁটকি উৎপাদনকারী হানিফ মিয়া জানায়, সৈকতে প্রায় ৩০ বছর ধরে শুঁটকি মাছের ব্যবসা করছেন তিনি। প্রতিবছর বিভিন্ন কারণে স্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছে তাদের। এর ফলে তাদের অনেক সময় লোকসান গুনতে হয়। এমনকি দোকানিদের চাহিদানুযায়ী মাছ শুকাতে পারছেন না। আর দোকানিরাও ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে পারে না।

কুয়াকাটার একাধিক শুঁটকি দোকানিরাও একই কথা জানান। যারা শুঁটকি তৈরি করে তাদের বার বার স্থানান্তরিত করা হয়। ফলে দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও অনেক সময়ই পছন্দের শুঁটকির অভাবে ক্রেতাদের দেওয়া যায় না। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করণের লক্ষ্যে একটি স্থায়ী পল্লী নির্ধারণের দাবি সংশ্লিষ্ট সবার।

কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, স্থায়ী শুঁটকি পল্লী নির্মাণের লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে শুঁটকি ব্যবসায়ীদে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *