পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: আজ পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজের একাডেমীক কাউন্সিলের সভায় পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে গণপূর্ত বিভাগের মালামাল সরবরাহ কাজে বাঁধা সহ চাঁদাবাজীর অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কার সহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: মো: মনিরুজ্জামান শাহিন বলেন ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ সাদিকুর রহমানকে একবছর ও সাধারন সম্পাদক ইফাদুল ইসলামকে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কার সহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
উল্লেখ্য, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি পুরুষ ও মহিলা হোস্টেলে কাঠের আসবাবপত্র সেটিং ও ফিটিং-এ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করলে একাধিকবার ঢাকা থেকে আগত টেকনিশিয়ানরা ফেরত যেতে বাধ্য হয়। ছাত্রলীগের চাঁদাদাবির ঘটনায় আসবাবপত্র সরবরাহের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকাস্থ গণপূর্ত কাঠের কারখানা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজেদুল ইসলাম ৯ জুলাই পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ পাঠান।
এদিকে, আসবাবপত্র ফিটিংয়ের কাজে ছাত্রলীগের বাধা দেয়ার বিষয়ে ঢাকাস্থ কাঠের কারখানা বিভাগের নির্বাহী প্রকেশৗলী মো. সাজেদুল ইসলামের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক ডা: মো: মনিরুজ্জামান ১১ জুলাই কলেজের অধ্যক্ষ বরাবরে উল্লিখিত অভিযোগ ছাড়াও সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের বিরুদ্ধে ফিটিংসের কাজে আসা টেকনশিয়ানদের অবস্থানরত হোটেলে গিয়ে মারধর করা সহ মোবাইল কেড়ে নেয়া এবং ফিটিংসের কাজে না আসতে হুমকী প্রদর্শন করে আসার লিখিত অভিযোগ সহ জরুরুী ভিত্তিতে বিষয়টি সমাধানকরার অনুরোধ জানান।
আসবাবপত্র ফিটিংয়ের কাজে ছাত্রলীগের বাধা দেয়ার বিষয়ে ঢাকাস্থ কাঠের কারখানা বিভাগের নির্বাহী প্রকেশৗলী মো. সাজেদুল ইসলামের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ৭-সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কলেজের উপাধ্যক্ষ ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমানকে এ তদন্ত কমিটির আহবায়ক করা হয়। তদন্তে অভিযুক্তরা সরকার পরিবর্তনের আগে বিভিন্ন অজুহাতে তদন্ত কমিটির কাছে হাজির হননি। মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দিয়ে তদন্ত কমিটির কাছে নির্ধারিত দিনে হাজির না হয়ে ও সংবাদমাধ্যমে তাদের অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে করেন তারা।
এদিকে গত (১৬ জুলাই) বিকেলে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী এপ্রোনপড়া শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলায় আহত- হন কমপক্ষে ২৫ জন। এসময় হঠাৎ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের নেতৃত্বে ২৫/৩০ টি মটর সাইকেলে দেশীয় অস্ত্র- শস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে হামলা চালায় শিক্ষার্থী আন্দোলনকারীদের উপর । এ সময় তারা মেডিকেল পড়ুয়া ছেলেদের বেদম লাঠিপেটার সাথে সাথে মেয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করার মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটায়্ হামলা থেকে বাচার জন্য হোস্টেলে প্রবেশ করলেও ভিতরে প্রবেশ করে হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন। যে ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনার সংবাদ দেশের অধিকাংশ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়।
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ,বরিশাল বিএমএর সেক্রটারী অধ্যক্ষ মো: মনিরুজ্জামান শাহিন ঘটনার ৯ দিন পরে দেশের রাজনৈতিক অবস্থার টাল-মাটাল অবস্থার কারনে পরিবর্তিত পরিস্থিতী আচ করতে পেরে গা বাচাতে “বহিরাগতদের হামলায় পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজের বিভিন্ন ভবনের ক্ষয়ক্ষতি তথ্য প্রদান ওসাধারন ডায়েরী হিসেবে লিপিবদ্ধকরন প্রসঙ্গে ,ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পটুয়াখালী সদর থানাকে স্মারকনং ৯.১৪.৭৮০০.১৫২.১৮.০০১.২৪ (৬৩৭) স্মারকে একটি পত্র প্রেরন করেন।
মেডিক্যাল কলেজ কোটা সংস্কার অন্দোলনে অংশগ্রহনকারী পটপরিবর্তনের পরে ক্যাম্পাসে ফিরে এসে অধ্যক্ষ বরাবরে তাদের উপর হামলায় জড়িতদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অধ্যক্ষকে জানান।
ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হামলায় কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন ,এ ছাড়াও কলেজের আসবাবপত্র সরবরাহের কাজে ঐ নেতারাই চাদাঁদাবীসহ বিভিন্ন বাধাবিঘœ করায় তাদের নামে কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি পৃথক তদন্ত কমিটিও গঠন করেন। কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়া সহ প্রশাসনিক কারনে দুই দফা সময় বৃদ্ধি করা হয়।ছাত্রলীগের নেতারা কলেজ ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগায় তাদের স্বাক্ষ্য গ্রহন করতে সিভিল সার্জন অফিসে সম্পন্ন করা হয়। মালামাল সরবরাহের বাধার ঘটনায় ১৬ জন এবং হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ৬০ জন স্বাক্ষ্য দেয়।। দুটি তদন্ত কমিটিরই প্রধান ছিলেন ডা: মোস্তাফিজুর রহমান, একটিতে ৭ অপরটিতে ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১০ এবং ১১ তারিখ দুটি তদন্ত কমিটির রিপোর্টই অধ্যক্ষের কাছে জমা দেন।
আজ বৃহস্পতিবার একাডেমীক কাউন্সিলের মিটিংয়ে তদন্ত রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়।“ ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে দুিট তদন্ত কমিটির বিষয়ে কাল সভা” সভা এ সংক্রান্ত একটি রির্পোট দৈনিক ইনকিলাবের গতকালের অনলাইনে প্রকাশিত হয়।
অধ্যক্ষ মো: মনিরুজ্জামান শাহিন বলেন,আজ একাডেমীক কাউন্সিলের সভায় হোস্টেলে মালামাল সরবরাহে বাঁধা এবং চাদাঁবাজীর সাথে জড়িতের অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ সাদিককে একবছর ও সাধারন সম্পাদক ইফাদুল ইসলামকে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কার সহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির সাথে ইফাদুলের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের সম্পৃক্তাতা সহ মেডিক্যাল কলেজের সাধারন ছাত্রদের রাতে হোস্টেলে গিয়ে ভয়ভীতির অভিযোগও প্রমানিত হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।