বরিশাল অফিস :: পদত্যাগপত্র দাখিলের এক দিনের মাথায় প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, এছাড়া আর কারও প্রত্যাহারপত্র আমার কার্যালয়ে জমা পড়েনি।
ডেপুটি রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দিন গোলাপ জানান, বিভিন্ন বিভাগের ডিন, রেজিস্ট্রার, শিক্ষক-কর্মকর্তার অনুরোধে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তিনি প্রত্যাহার না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হত না। এতে সেশনজটসহ পড়ালেখার বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে শিক্ষার্থীদের দিক বিবেচনা করে তিনি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সকাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভুঁইয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর পদত্যাগপত্র দাখিল করেন। আর পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আব্দুল কাইউম তার স্ত্রী শেখ হাসিনা হলের ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট ড. ইসরাত জাহানসহ ১৯ জন নিজ নিজ দায়িত্বরত পদের অনুকূলে পদত্যাগপত্র রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দাখিল করেন বলে জানান রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম।
১৯ জনের মধ্যে প্রক্টর ড. মো. আব্দুল কাইউম তার স্ত্রী শেখ হাসিনা হলের ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট ড. ইসরাত জাহান ছাড়ও রয়েছেন প্রক্টরিয়াল বডির সহকারী প্রক্টর মো. গাজীউর রহমান, ড. মোহাম্মদ মাহফুজ আলম, মো. ফরহাদ উদ্দীন, শাওন মিত্র, মো, সাইফুল ইসলাম, পুষ্প রানি মজুমদার। এছাড়া রয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট ড. হেনা রানি বিশ্বাস, শেরে বাংলা হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ আবদুল বাতেন চৌধুরি, বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট ড. তারেক মাহমুদ আবীর, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান পদ থেকে ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন, টিএসসি পরিচালক ড. রহিমা নাসরিন, পরিবহণ পুল ম্যানেজার মো. মিজানুর রহমান, শারীরিক শিক্ষা অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সৈয়দ আশিক ই ইলাহি, শেরে বাংলা হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষক আব্দুল্লাহ আহমেদ ফয়সাল ও মোহাম্মদ সাকিবুল হাসান, বঙ্গবন্ধু হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষক মো. কবির হাসান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভুঁইয়া কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রক্টর ড. মো. আব্দুল কাইয়ুম স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে নিজেকে জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অদৃশ্য ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করতেন।
গেল সিটি নির্বাচনে তিনিসহ পদত্যাগ করা বেশিরভাগই নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা ও নির্বাচন প্রচারণা কমিটির সদস্য ছিলেন। তবে এসব কিছুর বাহিরে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, উপাচার্য ও প্রক্টরসহ মাত্র কয়েকজনের পদত্যাগের দাবি তোলা হলেও ২০ জনের পদত্যাগ মানে শিক্ষার্থীদের সেশনজটসহ নানান বিপাকে ফেলতে চেয়েছিলেন তারা। আর এরা কেউ শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করেননি, ফ্যাসিবাদের কথা চিন্তা করেছেন। তবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করায় অন্তত সামনে পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে।