পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: বছর দুয়েক আগে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পরিবার ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান জামাল ভুঁইয়া। ভাগ্য বদলের চেষ্টায় বড় দুই ভাইয়ের সঙ্গে নিজের সম্বলটুকুকে পুঁজি করে যোগ দেন পোল্ট্রি মুরগির ব্যবসায়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন ঠিকই কিন্তু নিজে ফিরলেন কফিনবন্দি হয়ে।
গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিজিবির গুলিতে নিহত হন ব্যবসায়ী জামাল। নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ফরজ আলী চেয়ারম্যান মার্কেট এলাকায় তাদের পোল্ট্রি মুরগির দোকানে ওই দিন বিকালে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। সেখান থেকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী এক হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় তার।
এর পর থেকে স্বামী হারানোর বেদনায় দিশেহারা জামালের স্ত্রী। অন্যদিকে পুত্র হারানোর শোকে মায়ের আহাজারি। পুরো পরিবেশ ভারী হয়ে আছে। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না তাদের আহাজারি। ছোট ছেলে জামালের স্মৃতি মনে করে অনবরত চলছে মা মেহেরজানের আর্তনাদ।
সরেজমিন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবী ইউনিয়নের খাসমহলে নিহত জামাল ভুঁইয়ার বাড়িতে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে। জামাল ভুঁইয়া ওই গ্রামের মৃত হারুল ভুঁইয়ার ছেলে।
নিহত জামালের বড়ভাই আলমাছ ভুঁইয়া বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকার পতন হইছে, এ জাতি নতুন করে স্বাধীন দেশ পাইছে (পেয়েছে) কিন্তু আমি তো আমার ভাইরে আর পামুনা (পাবোনা)। আমি চিরদিনের জন্য আমার জোরের ভাই হারাইছি, কষ্টে আমার বুকটা হাইট্টা (ফেটে) যায়।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরো বলেন, ‘আমার ভাই যে চেয়ারটায় বইতো (বসতো) আমার পাশেই চেয়ারটা পড়ে আছে কিন্তু আমার ভাই কবরে শুয়ে আছে। মনে হইতেছে আমার পাশে এখনো ভাই বইয়া (বসে) আছে। ও তো কোনো দোষ করে নাই ওরে ক্যান (কেনো) মারলো।