চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক : টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাত। গত ৭৫ বছরে এত বৃষ্টিপাত দেখেনি দেশটির মানুষ। এতে প্রধান বাণিজ্যিক শহর দুবাইয়ের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। সেখানে সৃষ্টি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, শপিংমল। এমনকি তলিয়ে গেছে বিমানবন্দরও। এতে পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দরটিতে ফ্লাইট ওঠানামা বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক বিমান সংস্থা তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে।
পশ্চিম এশিয়ার অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গণ্য করা হয় দুবাইকে। কিন্তু প্রবল ঝড়-বৃষ্টির জেরে যে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তাতে এই মুহূর্তে থমকে রয়েছে যাবতীয় কাজকর্ম। দুবাই মল এবং মল অফ দ্য এমিরেটসে ঢুকে গেছে পানি। পানিতে তলিয়ে গেছে মেট্রো স্টেশনও। কোথাও কোথাও হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে রয়েছে। নৌকায় চেপে পার হতেও দেখা গিয়েছে মানুষজনকে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ছবি এবং ভিডিও সামনে এসেছে দুবাইয়ের, তাতে পানিতে খেলনার মতো ভাসতে দেখা গিয়েছে দামি গাড়িকে। রাস্তাঘাট সব জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। গগনচুম্বী বিল্ডিংগুরোর সামনেও পানি থৈ থৈ অবস্থা। দুবাই বিমানবন্দরে নামার কথা থাকলেও বিপর্যয়ের জেরে একাধিক বিমানকে অন্যত্র ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে বুধবারও দুবাইয়ে পরিস্থিতি উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই। স্কুল-কলেজ আপাতত বন্ধ। আমিরাতের আল আইন এবং সৌদির আল হিলালের মধ্যে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফুটবল সেমিফাইনাল ম্যাচেও আবহাওয়ার প্রভাব পড়েছে। ঝড়-বৃষ্টির জেরে ম্যাচ ২৪ ঘণ্টার জন্য স্থগিত রাখা হয়।
তেলসমৃদ্ধ আমিরাত একটি মরুদেশ। সেখানে বৃষ্টির দেখাই পাওয়া যায় না। কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিপাত ঘটাতে হয়। তাই আচমকা ভারী বৃষ্টি, বন্যা কেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরেই আবহাওয়ার আচরণ খামখেয়ালি বলে দাবি তাদের।
জলবায়ু পরিবর্তনের জেরেই এমন পরিস্থিতি বলে জানিয়েছে আমিরাতের সরকারও। আগামী দিনে প্রায়শই এমন ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।
তবে দুবাইয়ের এই বন্যা পরিস্থিতির জন্য বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ ‘ক্লাউড সিডিং’-কেই দায়ী করেছেন। তারা বলছেন, অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তির কারণেই বানভাসি হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যিক শহর দুবাই।
বিশ্বের মধ্যে অন্যতম উষ্ণতম এবং শুষ্ক মরু অঞ্চল হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। সেখানে বৃষ্টি প্রায় হয় না বললেই চলে। আর সেই কারণেই বৃষ্টির পরিমাণ বাড়াতে ‘ক্লাউড সিডিং’ প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হয়েছে। যার ফলে কৃত্রিম বৃষ্টি তৈরি করা যায়। এই প্রযুক্তির আসল উদ্দেশ্য হলো, মরু এলাকায় পানির ঘাটতি মেটানো।
এমনিতে বছরে দুবাইয়ে গড়ে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। সেই তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টাতেই ৮০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে মঙ্গলবারই সর্বাধিক বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আমিরাতের সরকার।
দেশের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, গত ৭৫ বছরে এত পরিমাণ বৃষ্টি দেখা যায়নি। খতম আল-শকলায় ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ২৫৪.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দেড় বছরে যে বৃষ্টি হয়, তা একদিনে হয়ে গিয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ ইঞ্চি পানি জমে যায়।
আবহাওয়া বিভাগের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। বন্যাদুর্গত এবং জলমগ্ন এলাকা থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে সবাইকে।