পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা নদীর তীরে কয়লা ভিত্তিক তিনটি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ও কয়লা পরিবহনের জন্য রাবনাবাদ চ্যানেল ব্যবহার করা হয়। তবে বর্তমানে চ্যানেলটির নাব্যতাসংকটের কারণে কয়লা পরিবহনে বড় জাহাজ ভিড়তে না পারায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে কেন্দ্রগুলো।
পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী শাহ আব্দুল মাওলা জানান, বর্তমানে রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা যথেষ্ট না থাকায় লাইটারিংয়ের মাধ্যমে কয়লা খালাস করতে হচ্ছে, যা পরিবহন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়ছে বিদ্যুতের মূল্যে।
জানা গেছে, আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর একটি বর্তমানে উৎপাদনে রয়েছে, একটি উৎপাদনের অপেক্ষায় এবং অন্যটি নির্মাণাধীন। চ্যানেলের গভীরতা সংকটের কারণে কয়লা পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় বড় জাহাজগুলো সরাসরি বন্দরে ভিড়তে পারছে না। বর্তমানে জোয়ারের সময় চ্যানেলের গভীরতা ৬.৫ মিটার এবং ভাটার সময় তা ৫.৯ মিটারের নিচে নেমে যায়। অথচ বড় জাহাজ চলাচলের জন্য ৮.৭ মিটার গভীরতা প্রয়োজন।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জোবায়ের আহমেদ বলেন, পায়রার তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ সরবরাহ করে। প্রতি মাসে এই কেন্দ্রগুলোতে তিন লাখ মেট্রিক টন কয়লা পোড়ানো হয়। চ্যানেলের গভীরতা ১৩-১৪ মিটার না থাকায় পুরোপুরি লোডিং করে কয়লা আনতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে শীতের সময় গভীরতা পাঁচ মিটারের নিচে নেমে যায়, যা কয়লা পরিবহনের ক্ষেত্রে বড় বাধা।
পায়রা বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী জানান, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বেলজিয়ামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘জান ডি নুল’ এর মাধ্যমে ৬,৫০০ কোটি টাকার ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প শুরু হয়, যা ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে শেষ হয়। এরপর আগস্ট পর্যন্ত ম্যানটেইনেন্স ড্রেজিং চললেও তা এখন বন্ধ রয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই আবার ম্যানটেইনেন্স ড্রেজিং শুরু করা যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
চ্যানেলের নাব্যতা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে কয়লা পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাবে এবং উৎপাদন ব্যয়ও কমবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহে উন্নতি ঘটবে এবং পায়রা বন্দরের কার্যক্রম পুনরায় স্বাভাবিক হতে পারবে।
—