শিরোনাম

পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের গ্রামের বাড়িতে চন্দ্রদীপ নিউজ টিম

Views: 117

বহুল আলোচিত তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা পাঁচারসহ বিভিন প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল অংকর অর্থ লোপাটকারী পলাতক প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পিক হালদার) অর্থ লোপাটের যে সিন্ডিকেটটি পরিচালনা করতেন, তার একটি অংশ তার মতোই সাধারণ পরিবার থেকে আসা। যাদের সবার বাড়ি পিকে হালদারের মতো পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজলার বিভিন্ন গ্রামে। পিকে হালদার ও তার সহযোগিরা নিজ এলাকায় শিক্ষানুরাগী, মানবদরদী, দানবীর হিসেবেই পরিচিতি ছিলেন অন্তত. কেলেংকারির ঘটনা জানাজানি হওয়ার আগে। তার সাঙ্গপাঙ্গরা কে-কোথায় আর কেমনই বা আছে-এ সম্পর্কে তথ্য জানতেই চন্দ্রদীপ প্রতিনিধি এসএম পারভেজের বিশেষ প্রতিবেদন।

দুদকের হাতে গ্রেফতারকৃত তার তিন সহযোগী অবন্তিকা বড়াল, সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অন্দিদিতা মৃধার বাড়ি পিরাজপুরের নাজিরপুর উপজেলায়। বাজারের সাধারণ একজন দর্জির ছেলে পিকে হালদারের মতো তার সহযোগীরা-ও সাধারণ পরিবারের সন্তান। যদিও তারা সবাই বর্তমানে বিপুল অর্থ ও বিত্ত-ভৈববের মালিক। ঢাকায় দামী ফ্লাটবাড়িসহ দেশ-বিদেশে রয়েছে তাদের অর্থ ও সম্পত্তি।

পি কে হালদার ও তার সহযোগী:  এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আলোচিত পিকে হালদারের বাবা মৃত প্রাণবেন্দু হালদার পেশায় ছিলেন দীঘিরজান বাজারের একজন দর্জি। মা লীলাবতি হালদার ছিলেন একজন স্কুল  শিক্ষক। পিকে হালদার দীঘিরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও পাশ্ববর্তী বাগেরহাটের সরকারি পিসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর বুয়েটের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নিয়ে বেক্সিমকা গ্রুপের জুট ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেন। ১৫-১৬ বছর আগে ভিন্ন ধর্মের এক নারীকে বিয় করার পর থেকে পিকে হালদার গ্রামছাড়া হন। তার এই অর্থপাচারের কেলেঙ্কারী ফাঁস হওয়ার পর শিক্ষিকা মা আরেক ছেলে প্রীতিশ হালদারের বাড়ি ভারতের অশোকনগর চলে গেছেন। পিকে হালদারের আরেক ভাই প্রানেশ হালদারও কানাডায় অবস্থান করছেন।

দীঘিরজান গ্রামে তার প্রতিবেশী কলেজ শিক্ষক অধ্যক্ষ দীপ্তেন মজুমদার জানান, পিকে হালদারকে একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে এলাকাবাসী চিনত। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার সঙ্গে তার তেমন যোগাযোগ ছিলো না । মানুষ জানতো প্রকৌশলী পেশায় তিনি অনক বড় চাকরি করন।

কুষ্টিয়ায় একটি জুট মিলসহ তার কোটি কোটি টাকার ব্যবসা ছিল বলে মানুষ জানে। অঙ্গন হালদার নামে নিজ গ্রামের জনৈক ব্যক্তি ম্যানেজার হিসেবে পি কে হালদারের ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশানা করেন। দীঘিরজান গ্রামে মা লীলাবতীর নাম একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন পিকে হালদার, তারও তত্ত্বাবধায়ক অঙ্গণ হালদার।

বর্তমান পিকে হালদারের গ্রামের বাড়িতে পুরানা একটি কাঠের টিনশড ঘর আছে, তার চাচাতা ভাই দীপেন্দ্রনাথ হালদার এখানে বসবাস  ও দেখাশুনা করেন।

দীঘিরজান গ্রাম ওই বাড়িতে গেলে পি কে হালদারের চাচাতা ভাই দীপেদ্র নাথ হালদার, ভাইয়ের ছেলে দ্বীপ হালদার, ভাইয়ের মেয়ে স্মৃতি হালদার জানান, তারা এই বাড়ি দেখাশুনা করছেন। তারা জানান, পিকে হালদারর এই কেলেঙ্কারির খবর শোনার পর তারাও অনেক ভয় ও শংকার মধ্য দিন কাটাচ্ছেন।

এদিকে, তার আয়কর উপদষ্টা হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন একই উপজেলার বাকসি গ্রামের চকিদার রাজেন্দ্রনাথ মৃধার ছেলে সুকুমার মৃধা। বিগত ‘ওয়ান ইলেভেন’ এর সময় থেকে নিজ গ্রাম নাজিরপুরসহ পিরাজপুর ও খুলনায় একজন দানশীল, শিক্ষানুরাগী, সংবাদপত্রসবীসহ নানা নামে তার খ্যাতি ছড়াতে থাকে। পেশাগত জীবনে তিনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, খুলনার রপসা কলেজের অধ্যক্ষসহ একাধিক চাকরি করেন এবং এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতির দায়ে চাকরি হারান বলে জানা যায়। নিজ গ্রাম বাকসিতে রাজলক্ষী ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেন, সরকারি খাস জমিতে মহাবিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাঁচটি মন্দির, দুটি ছাত্রীনিবাস, বৃদ্ধাশ্রম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া এলাকায় অনেক মসজিদ ও মাদ্রাসা তিনি   প্রতিষ্ঠা করেন বলে তার প্রতিষ্ঠানের ম্যানজার সুভাষ চদ্র মন্ডল দাবি করেন।

সুকুমার মৃধার খুলনায় ‘আলোকিত বাংলাদেশ’নামে অধুনালুপ্ত একটি সংবাদপত্রও ছিল । পার্শ্ববর্তী বাগরহাটের কচুয়া উপজেলার আন্ধারমানিক গ্রামে ৫০ বিঘা জমিতে একটি হরিণের খামার গড়ে তোলেন বন্য প্রাণী আইন লংঘণ কর। হরিণ বিক্রি ও মহলবিশেষকে ম্যানেজ করতে হরিণের মাংস দেওয়ার অভিযাগও রয়েছে সুকুমারের বিরুদ্ধে। তিনি পিকে হালদারের দেহরক্ষীর সঙ্গে নিজ মেয়ে অনিদিতার বিয়ে দিয়েছেন। তার বোন মঞ্জ রানীর দুই ছেলে স্বপন মিস্ত্রি ও উত্তম মিস্ত্রিও পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী। এই দুজনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে দুদক তাদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরাপ করলেও স্বপন ইতোমধ্যে ভারত ও উত্তম দাশ আত্মগোপন করে আছেন।

দুদকের হাতে আটক পিকে হালদারের সহযোগী কাম বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল ওরফে কেয়ার গ্রামের বাড়িও নাজিরপুরে হলেও তাদের পিরোজপুর শহরের খুমুরিয়ায় আরেকটি বাড়ি আছে। অবন্তিকার বাবা ছিলেন সরকারি কলেজের প্রভাষক বীর মুক্তিযোদ্ধা অরুণ কুমার বড়াল। তারা তিনবোন। বাবা মারা যাওয়ার পর লেখাপড়া শেষ করে অবন্তিকা ঢাকায় যান।

সুত্র জানায়, রাজধানীর ধানমন্ডির ১০/এ সাত মসজিদ রোডে দামী ফ্ল্যাট রয়েছে অবন্তিকার। কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ওই ফ্ল্যাট তার বিধবা মা অর্পনা বড়াল ও অন্য দুই বোন বসবাস করছে। অবন্তিকা গ্রেফতার হওয়ার কয়েক দিন আগে তার মা অপর্না বড়াল পিরাজপুরের বাড়িতে এসেছিল। দুই তিন দিন থাকার পরই হঠাৎ করে আবার ঢাকায় চল যান তিনি।

##

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *