শিরোনাম

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মা-চাচা হত্যা করে শিশু মরিয়মকে

Views: 44

বরিশাল অফিস :: পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের রামভল্লবপুরে ৩য় শ্রেণির ছাত্রী শিশু মরিয়মকে (৮)কে হত্যা করে তার গর্ভধারিনী মা রিনা বেগম ও চাচা মো. সেন্টু মৃধা। গত ৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর শিশু মরিয়মকে নিয়ে তার মা রিনা বেগম পুলিশের ভয় দেখিয়ে মাঠের ওপারের বাড়ি যাওয়ার কথা বলে মাঠের মাঝে একটি পরিত্যক্ত ভিটায় নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব থেকেই উপস্থিত ছিল শিশুটি চাচা মো. সেন্টু মৃধা। মা ও চাচা মিলে পরিত্যক্ত বাড়িতে মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে শিশু মরিয়মকে।

পুলিশের তদন্ত সূত্রে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের পর পরই রিনা বেগম বাড়িতে এসে মরিয়মকে খুঁজে না পাওয়ার অভিনয় করে চিৎকার চেঁচামেচি ও খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে গ্রামের সকলে জেনে যায় মরিয়মকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরই বাড়ির সকলে মিলে শিশুটিকে খুঁজতে থাকে।

এরই মধ্যে নিহত শিশুটির মা মরিয়মকে খোঁজার নাম করে পুকুরে নেমে হত্যার সময় কাপড়ে লেগে থাকা রক্ত ধুয়ে ফেলে। পরবর্তীতে রিনা বেগম রাত ৯ টার দিকে বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত ভিটায় শিশুটির রক্তমাখা মরদেহ ও গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় শনাক্ত করে কান্নাকাটি করে সকলকে অবহিত করে। ঘটনার পরপরই দশমিনা থানার পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পটুয়াখালী মর্গে পাঠায়।

পরদিন সকালে পটুয়াখালী জেলা পুলিশের একাধিক টিম চাঞ্চল্যকর এ হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে করে খুঁজতে থাকেন হত্যাকান্ডের ক্লু। তবে খুব দ্রুত পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের দেয়া ঘটনার বিবরণে পুলিশ সুপার তাৎক্ষণিকভাবে সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। হত্যার সঙ্গে জড়িতদের সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পরই ৫ ফেব্রুয়ারি নিহত শিশু মরিয়মের চাচা সেন্টুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নিহত শিশু মরিয়মের মা রিনা বেগমকেও গ্রেপ্তার করে। উভয়ই হত্যাকাণ্ডের সত্যতা স্বীকার করে পুলিশ ও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

পুলিশের দেয়া তথ্যে আরও জানা যায়, পূর্ব থেকেই প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল শিশু মরিয়মের বাবা ও চাচাদের। মামলায় জর্জারিত হয়ে আসামিদের অনেক টাকা পয়সা খরচ হয়। প্রতিপক্ষদের ঘায়েল করতেই পূর্ব থেকেই রিনা বেগমের তিন মেয়ের এক মেয়েকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে তার মা ও শিশুটির আপন চাচা।

ঘটনার দুইদিন পূর্বে শিশুটি তার ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে আসে স্বপরিবারে। সুযোগ বুঝে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই দিন সন্ধ্যার পর শিশুটিকে নির্জন ও পরিত্যক্ত ভিটায় নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। আসামিদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী চাচা লাঠি দিয়ে শিশুটির মাথায় সজরে পরপর দুইটি আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে শিশু মরিয়মের মা শিশুটির ব্যবহৃত ওড়না দিয়ে মুখ চেপে ধরে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে দুইজন দুই দিকে চলে যায়।

স্থানীয়রা জানান, শিশুটি অনেক ভালো ছিল সকলের সঙ্গে মিষ্টি করে কথা বলতো । কিভাবে একজন মা তার সন্তানকে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করতে পারে। এ কথা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। আমরা এর কঠিন বিচার চাই। কোন মা যেন এমন ঘটনা ঘটানোর চিন্তাও না করে। মায়ের কাছে সন্তানের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা আর সেই মা যদি প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে হত্যা করে নিজের পেটের সন্তানকে তাহলে আমরা কোথায় বসবাস করছি। এমন মায়ের ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই।

পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম জানান, ক্লুলেস এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। গর্ভধারিণী মা তার দেবরের সহযোগিতায় সন্তানকে হত্যা করেছে। আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মূল পরিকল্পনা ও হত্যাকাণ্ডটি শিশুটির মা রিনা বেগম ও চাচা মো. সেন্টু মৃধা ঘটিয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত আলামত জব্দ করা হয়েছে। পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *