শিরোনাম

ফিরে দেখা বরিশাল: রাজনৈতিক উত্তেজনা, সহিংসতা ও গণঅভ্যুত্থান

Views: 8

গত এক বছরের মধ্যে বরিশালে ঘটে গেছে নানা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, যা প্রভাব ফেলেছে স্থানীয় রাজনীতি, সামাজিক পরিস্থিতি ও জনগণের জীবনে। ২০২৪ সালের ৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু হয়ে ৩৬ জুলাই বা ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান এবং ফ্যাসিবাদের পতনে শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাকর্মীদের পলায়ন—এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। বরিশালও ছিল এসব ঘটনাপ্রবাহের অংশ।

নির্বাচন ও বরিশালের আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব ::

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বরিশাল আওয়ামী লীগে তীব্র বিরোধ দেখা দেয়। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য কর্ণেল অবঃ জাহিদ ফারুক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য সালাউদ্দিন রিপনের মধ্যে ছিল তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এতে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহের সমর্থন পেয়ে স্যালাউদ্দিন রিপন আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠেন, যা আওয়ামী লীগে বিভক্তির সূচনা ঘটায়। সাধারণ ভোটাররা এ নির্বাচন বয়কট করে সরকারের প্রতি তাদের অনাস্থা প্রকাশ করে।

বিস্ফোরণ, ধর্ষণ এবং শ্রমিক সংঘর্ষ ::

বরিশালে একের পর এক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। ১৩ ফেব্রুয়ারী গৌরনদী উপজেলায় বোমা উদ্ধার করতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটে, যার ফলে পুলিশ সদস্যসহ তিনজন আহত হয়। মার্চে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশের এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ। এই ঘটনায় বরিশালের বানারিপাড়া উপজেলার মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আলী হোসেনও জিম্মি হন। এরপর ২১ এপ্রিল বাকেরগঞ্জের এক বৃদ্ধাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়, যা বরিশালে ব্যাপক আলোচিত হয়।

এদিকে ২৩ মে ফরচুন সু হাউজে শ্রমিকদের আন্দোলনে আনসার সদস্যরা গুলি চালায়, যাতে ৫ শ্রমিক আহত হয়। এর কয়েকদিন পর, ১২ জুন কাউনিয়ায় একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে, যেখানে বাবা তার পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে হত্যা করে আত্মহত্যা করেন।

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান ::

জুলাই থেকে শুরু হওয়া কোটা আন্দোলন ও বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এক পর্যায়ে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়। ১ আগস্ট থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে, যার ফলে সরকার পালিয়ে যায় এবং ৮ আগস্ট একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। এতে বরিশালের আওয়ামী লীগ নেতা টুটুল চৌধুরী নিহত হন এবং শহরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক সহিংসতা ঘটে।

গ্রেফতার, বিস্ফোরক এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা ::

অগাস্টে বরিশাল আসনের সাবেক সাংসদ জাহিদ ফারুক শামিন গ্রেফতার হন। এরপর কয়েকটি গ্রেনেড উদ্ধার হওয়া, ১ অক্টোবর বিএনপির অফিসে আক্রমণ এবং ২৩ অক্টোবর মঈন আব্দুল্লাহর গ্রেফতার—এই ঘটনাগুলোর কারণে বরিশালে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ডিসেম্বরে বরিশালের সড়ক দুর্ঘটনা এবং স্প্রীডবোট সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়, যা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

প্রশাসনিক পরিবর্তন এবং বরিশালবাসীর প্রত্যাশা ::

গত এক বছরে বরিশালের প্রশাসনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিযুক্ত হওয়ার পর, বরিশালবাসী তাদের সুসংহত ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী। তবে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম এখনও হতাশাজনক, যা জনগণের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *