বরিশাল অফিস :: কাজ শেষ হওয়ার পরও চালু না হওয়ায় দেশের উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে পানি শোধনাগার প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে না পৌরবাসী।
আজ-কাল উদ্বোধনের কথা শোনা গেলেও নির্মাণের ছয় মাসেরও বেশি সময় পার হলেও চালু হয়নি এটি। বেতাগী শহরের বিশুদ্ধ পানির অভাব দীর্ঘদিনের। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরও নেমে গেছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে ও বেতাগী পৌরসভার সহযোগিতায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই প্রকল্প চালু হলে পৌরবাসীর সুপেয় পানির সংকট দূর হবে। প্রতিদিন ১ লাখ লিটার সুপেয় পানি সরবরাহের কথা রয়েছে এ শোধনাগার থেকে।
পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নিরাপদ ও আর্সেনিকমুক্ত খাবার পানির সংকটের স্থায়ী সমাধানে ৩২টি পৌরসভায় ‘পানি সরবরাহ ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন’ শীর্ষক প্রকল্প নেওয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ৪ কেটি ৯১ লাখ ২২ হাজার ৯৪৩ টাকা ব্যয়ে পৌরসভার স্লুইসগেট এলাকায় পানি শোধনাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ মেসার্স এনঅ্যান্ডসি-এসআরই (জেবি) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। একই বছরের ১১ জুন পানি শোধনাগার প্রকল্পের আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে তারা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কার্যালয় জানায়, পৌরবাসীর বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়। ৬ মাসেরও আগে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলকভাবে পৌরবাসীর মধ্যে সুপেয় পানি সরবরাহ করে। পরে চালু না করতে পারার কারণে বর্তমানে বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে শোধনাগারটি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে, প্রকল্পটি ছয় মাসেরও আগে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত চালু হয়নি। ফলে তাদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। পৌরসভার কয়েক হাজার বাসিন্দা চরমভাবে নিরাপদ পানির সংকটে রয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তারা সুপেয় পানি পাবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি। কী কারণে প্রকল্পটি চালু হতে এতটা দেরি হচ্ছেÑ তা-ও বলতে পারেন না সংশ্লিষ্টরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বেতাগী উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মহসিন খান বলেন, ‘জনগণের করের অর্থে নির্মিত প্রকল্প শেষ হওয়ার পরও মাসের পর মাস সেটা চালু না হওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। দ্রুত পানি শোধনাগারটি চালুর ব্যবস্থা করা হোক।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এনঅ্যান্ডসি-এসআরইর (জেবি) সাইড ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম জানান, শোধনাগারটি চালুর উপযোগী করতে পরিচ্ছন্ন ও প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এখন অলস পড়ে থাকায় দিন দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দীন বলেন, ‘শুরুতেই কাজে নানা অনিয়ম ও নিম্নমানের পাইপ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। চালু না হতেই জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে নতুন এই প্রকল্প। কীভাবে পানি শোধনাগারটি চালু করা যায় এ নিয়ে পৌর প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করা হবে।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী সজল চন্দ্র সিকদার বলেন, ‘খুব নিকটবর্তী সময়ে এটি চালু করতে পৌর প্রশাসকসহ বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করছি। তারা সরেজমিনে পরিদর্শনের পর কোনো সমস্যা থাকলে তা নতুনভাবে ঠিকঠাক ও সংস্কার করে পরীক্ষামূলকভাবে তিন মাস পানি সরবরাহ করবে। সফল হওয়ার পরই শোধনাগারটির হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রাহক পর্যায়ে বিল থেকে শুরু করে এর সবকিছু বাস্তবায়ন ও দেখভাল করবে পৌরসভা। এটি চালু করা গেলে পৌরবাসী শোধনকৃত বিশুদ্ধ পানি পাবে এবং এতে পৌরসভার রাজস্ব আয় বাড়বে।’
পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহমদ বলেন, ‘কাজে ত্রুটি কিংবা কোনো ধরনের সমস্যা না থাকলে দ্রুতসময়ে কীভাবে প্রকল্পটির সুফল পৌরবাসী পেতে পারে, এজন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।’