শিরোনাম

বরগুনার আমতলীতে পল্লী বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিলে অতিষ্ঠ গ্রাহকরা

Views: 52

বরগুনা (অর্ণব শরীফ) : পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন বরগুনার আমতলী জোনাল অফিসের অধীনস্থ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা ভুতুড়ে বিল নিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিদিনই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আমতলী জোনাল অফিসে বাড়তি বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে হাজির হচ্ছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। এতে করে এক দিকে যেমন বিতরণ বিভাগের কর্মকর্তারা বিপাকে পড়েছেন তেমনি গ্রাহকদের মাঝেও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে খারাপ আচরণের পাশাপাশি গ্রাহকরা বিদ্যুৎ অফিস থেকে প্রেরিত ভুতুড়ে বিল নিয়ে ভোগান্তি ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তেরও অভিযোগ করেন।

পৌর শহরের মেহেদী হাসান রিপন, তারিকুল ইসলাম, জাকারিয়া, কবির শিকদার, বশির উদ্দিন, জাকির হোসেন, স্বপন কান্তি শীল, হোসনে আরা, রুমা আক্তারসহ অনেক বিদ্যুৎ গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, আমতলী পল্লীবিদ্যুৎ জোনাল অফিস থেকে জুলাই মাসের তৈরিকৃত বিদ্যুৎ বিল অফিসের নির্ধারিত তারিখের মধ্যেই তারা পরিশোধ করেছেন। বিল পরিশোধের পরেও আগষ্ট মাসের বিলের সাথে বকেয়া হিসাবে জুলাই মাসের বিল যুক্ত করে দেওয়ার পাশাপাশি বাড়তি বিল করা হয়েছে। ওই অবস্থায় গ্রাহকদের বাড়তি টাকা খরচ করে অফিসে গিয়ে বিল সংশোধন করে আনতে হয়েছে।

গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ অফিসের স্টাফদের আচার-আচরণও ভালো নয়। নিয়মিত মিটার রিডিং না দেখেই মনগড়া বিল তুলে দেওয়া হয়। ফলে কোনো মাসে বিদ্যুৎ বিল খুব কম আবার কোনো মাসে খুব বেশি বিল আসে। তারা আরো বলেন, ডিমান্ড চার্জ ও ভ্যাট ছাড়াও বিদ্যুৎ বিলের সাথে প্রতিমাসে দশ টাকা হারে মিটার ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে। অথচ গ্রাহকরা টাকা দিয়ে মিটার কিনে নেওয়ার পরেও প্রতি মাসে তাদের কাছ থেকে মিটার ভাড়া হিসেবে ১০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এসব বিষয়ে সঠিকভাবে তদারকি করার কেউ নেই।

বিদ্যুৎ গ্রাহক ঝন্টু তালুকদার বলেন, বিদ্যুৎ বিল নিয়ে পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধিন আমতলী জোনাল অফিসের অধীনস্থ গ্রাহকদের অভিযোগ এটাই প্রথম নয়। প্রায়ই বিদ্যুৎ বিল দেখে অনেক গ্রাহকের চোঁখ কপালে উঠে যায়। ব্যবহৃত ইউনিট না দেখেই অতিরিক্ত বিল করেন, বিল নিয়ে অফিসে অভিযোগ করতে গেলে অফিস স্টাফরা গ্রাহকদের সাথে আজেবাজে ব্যবহার করেন। এতে গ্রাহকরা চরম অতিষ্ঠ।

গ্রাহক প্রবাসী সাকুর আহম্মেদ এর অভিযোগ, মিটারের ইউনিট না দেখে বিদ্যুৎ কর্মীরা আন্দাজে মনগড়া ইউনিট বসিয়ে বিল তৈরী করে। আমি দেশের বাহিরে থাকি আমার পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় বসবাস করে। আমার আমতলীর বাসা মাসের পর মাস তালাবদ্ধ থাকে অথচ প্রতিমাসে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে। মিটার না দেখে বিল করে এভাবে গ্রাহকদের গলা কেটে বিল না নেওয়া ও অহেতুক গ্রাহকদের হয়রানি না করার জন্য অনুরোধ করছি।

হলদিয়ার তক্তাবুনিয়া গ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহক শাহিন হাওলাদার বলেন, শহরে তো ভালোই বিদ্যুৎ থাকে আমাদের গ্রামে দিনে রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ চলে গেলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও কারণ জানতে চেয়ে বিদ্যুৎ অফিসের সংশ্লিষ্টদের মুঠোফোনে কল করলেও কেউ তা রিসিভ করেন না।

তারপর মিটার রিডিং না দেখেই মনগড়া বিল তৈরি করছে কিছু সংখ্যক পল্লী বিদ্যুৎ কর্মী। জুলাই মাসে আমার ৩৪৫ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসলেও আগস্ট মাসে বিল আসছে ১২৭০ টাকা। তার প্রশ্ন ওই ভুতুড়ে বিল কোথা থেকে এলো।

আমতলী সদর ইউনিয়নের নাচনাপাড়া গ্রামের হিরন মৃধা বলেন, পল্লী বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিলে অতিষ্ঠ আমাদের এলাকার গ্রাহকরা। অফিসে ধরনা দিয়েও তারা কোনো কুল-কিনারা পাচ্ছেন না। বিল নিয়ে অফিসে গেলে তারা জানিয়ে দেয় বিলে কোন সমস্যা নেই, ঠিক আছে। একদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিং অন্যদিকে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল সবমিলিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন আমতলী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জয় রায় বলেন, যে সকল গ্রাহক বিদ্যুৎ বিলে উল্লেখিত তারিখে পূর্বের মাসের বিল পরিশোধ করেছেন তাদের বর্তমান মাসের বিদ্যুৎ বিলের সাথে পূর্বের মাসের বিল যুক্ত হওয়ার কথা না। তারপরেও আমাদের অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে যুক্ত হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। মিটার না দেখে মিটার রিডিং ম্যানরা বাড়তি বিদ্যুৎ বিল করার বিষয়ে আমরা অভিযোগ পাচ্ছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি গ্রাহকদের সাথে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের খারাপ আচরণ বিষয়টি অস্বীকার করে আরো বলেন, আমরা যথাসাধ্য গ্রাহকদের নিয়মিত সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *