শিরোনাম

বরগুনার সাগরে মাছের সংকট: জেলেরা ও ব্যবসায়ীরা বিপদে

Views: 9

বরগুনার সাগরে মাছ শিকার করতে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলেরা। শুধু জেলেরা নয়, মাছ না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মৎস্য ব্যবসায়ী ও ট্রলার মালিকরাও। ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে অনেক ট্রলার মালিক বাধ্য হয়ে বন্ধ রেখেছেন মৎস্য শিকার। এ পরিস্থিতি এতটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণকেন্দ্র পাথরঘাটায় রাজস্ব আদায়ে তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

পাথরঘাটার মৎস্য অবতারণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, মাছ বিক্রির হাঁকডাক সরগরম থাকার কথা থাকলেও সেখানে মাছের বড় ঘাটতি। সাগর থেকে ফিরে আসা ট্রলারগুলোয় মাছ কম থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। খরচের টাকা না উঠায়, প্রতি ট্রিপেই বাড়ছে ঋণের বোঝা। ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা, পরিবারের ভরণপোষণ নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলেরা। মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সাগরে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পাওয়ায় পরিস্থিতি আরো কঠিন হয়ে পড়েছে।

মৎস্য অবতরণকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়, কিন্তু বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার মাছ। এর ফলে রাজস্ব আদায়ও ব্যাপকভাবে কমেছে। গত দুই দিনে এই অবতরণকেন্দ্র থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র এক লাখ টাকা।

এদিকে, জেলেরা অভিযোগ করেছেন, সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা প্রতিবেশী দেশের সাথে মিলিয়ে না দেয়ার কারণে, নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে প্রতিবেশী দেশের জেলেরা অবাধে মাছ শিকার করছে। আবার নিষেধাজ্ঞার সময় কিছু ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেলেও, নিষেধাজ্ঞার পরে অবৈধ ট্রলিং ট্রলারের জালে আটকে পড়ছে ডিম ও ছোট ছোট পোনা মাছ। এর ফলে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের প্রজাতি বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে। তারা আরও অভিযোগ করেছেন, এই ট্রলিং বোটগুলো সাধারণত প্রভাবশালীদের মালিকানাধীন এবং প্রশাসন নিরব থাকে।

সাগরে মাছ না পেয়ে আক্ষেপ করে জেলে মো. ইউসুফ বলেন, “আগে নিষেধাজ্ঞার পর সাগরে প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো, কিন্তু এবার সাগরে একটাও মাছ নেই। সাগরে এত পরিমাণ ট্রলিং বোট চলে যে সামান্য মাছের ডিমও জালে আটকা পড়ে, সব ছোট মাছও মরে যায়।”

ট্রলার মালিকদের দুর্দশা নিয়ে আব্দুল মান্নান মাঝি বলেন, “২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ না পেয়ে অনেক ট্রলার মালিক তাদের বোট ঘাটে বেঁধে রেখেছেন। বর্তমানে একটা ট্রলার সাগরে পাঠাতে প্রায় ৫ লাখ টাকার খরচ হয়, কিন্তু অনেক বোটে ৫০ হাজার টাকার মাছও পাওয়া যাচ্ছে না।”

মৎস্য অবতারণকেন্দ্রের পাইকার কামাল বলেন, “ট্রলিং বোট, ঘোপ, বাদা ও নেট জালের কারণে সব রকমের মাছে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এই অবৈধ ট্রলিংগুলো আমাদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

এ বিষয়ে পাথরঘাটা মৎস্য অবতারণকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লে: কমান্ডার জি এম মাসুম শিকদার জানান, “জেলেরা সাগরে গিয়ে মাছ পাচ্ছেন না, তাই পাথরঘাটা অবতরণকেন্দ্রে মাছ কম আসছে এবং রাজস্ব আদায়ও কমছে। তবে আমরা আশা করছি, এই সংকট শিগগিরই কেটে যাবে।”

মো: আল-আমিন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম

 

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *