বরিশাল অফিস:: উপকূলীয় জেলা বরগুনা। এই জেলার চারদিকে নদী থাকায় কৃষিকাজে রয়েছে বাড়তি সুবিধা। জেলার আমতলী উপজেলা উৎপাদন হয় প্রচুর রসালো তরমুজ। আর সুস্বাদু তরমুজের জন্য বিখ্যাত উপজেলাটি। অল্প সময়ে বেশি লাভ পাওয়া যায় বলে দিন দিন তরমুজ চাষে ঝুঁকছে এখানকার বেশিরভাগ কৃষক। তরমুজ চাষের জন্য উপজেলার কৃষক পরিবারের সবাই ব্যস্ত সময় পার করছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আমতলী সদর, আঠারোগাছিয়া, গুলিশাখালী, কুকুয়া, হলদিয়া, চাওড়া ইউনিয়নে এ বছর ৫ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তরমুজ চাষে কৃষকরা মাঠে কাজ করছে। মাঠের পর মাঠ তরমুজের চারা রোপণের জন্য গর্ত তৈরি করছে। কেউ কেউ চারা রোপণ করছে।
সাহেববাড়ি এলাকার কৃষক মো. বাহাদুর বলেন, ‘গত বছর ভালো ফলন পাওয়ায় এবারও তরমুজ চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। কারও দম ফেলার অবস্থাও নেই। এ বছর ৯ একর জমিতে তরমুজ চাষ করছি।’ কুকুয়া এলাকার কৃষক মো. ইউসুফ বলেন, ‘এ বছর ১৬ একর জমিতে তরমুজ চাষ করছি। ঘরের নারীরাও সাহায্য করছে। সবাই এখন ব্যস্ত।’
পুরুষের পাশাপাশি পরিবারের নারী সদস্যরাও কাজ করছে মাঠে। বেতমোড় গ্রামের রিজিয়া বেগম বলেন, ‘গত বছর বৃষ্টিতে তরমুজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে। তাই এ বছর আগাম চাষ শুরু করেছে কৃষকরা। আমরাও কাজে সহযোগিতা করছি। আশা করি এবার লাভবান হব সবাই।’
হলদিয়া এলাকার রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর দুই বিঘা বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে লাভবান হব। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। নারী-পুরুষ সবাই মিলে মাঠে কাজ করছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ঈসা বলেন, ‘এ বছর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ৫ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যেকোনো সমস্যায় কৃষি অফিস কৃষকদের পাশে রয়েছে। সুপারভাইজাররা নিয়মিত খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, ‘কৃষি বিভাগের সহায়তা ও পরামর্শে আমতলীসহ বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় কম খরচে ভালো ফলনের মাধ্যমে লাভবান হওয়ায় তরমুজ চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। চলতি মৌসুমে তরমুজের বীজ রোপণ শুরু করেছে কৃষকরা। জমি তৈরি থেকে মৌসুম শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রায় চার মাসের মতো সময় লাগে তরমুজ বিক্রি করতে। এ ছাড়া তরমুজ উচ্চফলনশীল হওয়ায় অনেকেই পরীক্ষামূলক তরমুজ চাষ শুরু করেছে। আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে তরমুজ চাষের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে। সঠিক পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে কৃষকদের পাশে সব সময় আছি।’