শিরোনাম

বরিশালের গুঠিয়া মসজিদ’ দেখে মুগ্ধ হন সবাই

Views: 78

এস এল টি তুহিন,বরিশাল :: বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের চাংগুরিয়া গ্রামে যেতেই সড়কের পাশেই চোখে পড়বে ‘বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স’। যদিও সবার কাছে এটি ‘গুঠিয়া মসজিদ’ নামে বেশি পরিচিতি রয়েছে। সেখানে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি শবে-বরাত, শবে-মেরাজসহ সর্ববৃহৎ ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করেন।

মসজিদটিকে ঘিরে প্রতিদিনই বরিশালসহ দেশ ও বিদেশের পর্যটকরা আসেন। দিন দিন বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্সে ভ্রমণপিপাসু মানুষের উপস্থিতি বেড়েই চলছে। সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নয়নাভিরাম এ মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু তার নিজস্ব অর্থায়নে ২০০৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিনে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ২ লাখ ১০ হাজার নির্মাণ শ্রমিকের কাজের মধ্য দিয়ে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৬ সালে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়।

১৪ একর জমির ওপর নির্মিত মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্সের মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করলে হাতের ডান পাশে রয়েছে একটি পুকুর। পুকুরটি এমনভাবে খনন করা হয়েছে যাতে পানিতে মসজিদটির পুরো প্রতিবিম্ব দেখা যায়। পুকুরটির চারপাশ নানান রঙের ফুল ও ফলের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে। পুকুরে রয়েছে মোজাইক দিয়ে তৈরি শান বাঁধানো ঘাট। ঘাটের ঠিক উল্টো দিকে মসজিদের প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে দুটি ফোয়ারা। আর পুকুরের পশ্চিম দিকে মূল মসজিদের অবস্থান। মসজিদের লাগায়ো উত্তর দিকে রয়েছে প্রতিষ্ঠাতার মায়ের নামে মরহুমা মালেকা বেগম হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমাখানা।

দৃষ্টিনন্দন বরিশালের গুঠিয়া মসজিদ কমপ্লেক্সের তিন দিকে রয়েছে সু-বিশাল লেক, যা কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা বেষ্টনির কাজও করে থাকে। মসজিদটির পূর্ব-দক্ষিণ কোণে আড়াই একর জায়গায় রয়েছে কবরস্থান। আর উত্তর-পূর্ব কোণে রয়েছে গাড়ি পার্কিং ও নারী-পুরুষদের জন্য আলাদা ওযুখানা ও টয়লেট। মসজিদের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে রয়েছে একটি হেলিপ্যাডও। তবে পুরো কমপ্লেক্সের আঙিনাজুড়ে থাকা ফল ও ফুল গাছের বাগান মুসল্লিসহ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।

মূল মসজিদের দক্ষিণ দিকে রয়েছে প্রায় ১৯৩ ফুট উচ্চতার একটি মিনার। আর পুরো মসজিদজুড়ে রয়েছে ছোট-বড় ৯টি গম্বুজ। মসজিদ ভবনকে ঘিরে বিভিন্ন স্থানে ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে লেখা হয়েছে আয়াতুল কুরসি, সুরা আর রহমানসহ আল কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও সূরা।

এর বাইরে মসজিদ ভবনের সৌন্দর্য বাড়াতে বিভিন্ন স্থানে বর্ণিল কাচ, মূল্যবান মার্বেল পাথর, গ্রানাইট ও সিরামিক দিয়ে করা হয়েছে নকশার কাজ। মসজিদের দৃষ্টিনন্দন ঝাড়বাতি ছাড়াও রয়েছে বাহারি নকশার আলোকবাতির ব্যবস্থা। এছাড়া বাহিরে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স ঘিরেও রয়েছে বাহারি আলোকবাতি। যা রাতের বেলা মসজিদের শোভা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় লাইনের পাশাপাশি রয়েছে ১৫০/১৫ কেভিএ শক্তিসম্পন্ন নিজস্ব দুটি জেনারেটর।

মসজিদের নকশায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মসজিদের নকশাকে অনুকরণ করা হয়েছে। এছাড়া মসজিদের স্তম্ভটি বিশ্বের বিভিন্ন পবিত্র স্থানের মাটি ও জমজমের পানি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যেসব স্থান থেকে মাটি সংগৃহীত হয়েছে সেগুলো হলো- কাবা শরিফ, আরাফাতের ময়দান, মুযদালিফাহ, ময়দানে মিনা, জাবালে নূর পাহাড়, জাবালে সূর পাহাড়, জাবালে রহমত পাহাড়, নবীজীর জন্মস্থান, মা হাওয়া’র কবরস্থান, মসজিদে রহমত, মসজিদ এ কু’বা, ওহুদের যুদ্ধের ময়দান, হযরত হামজা (রা.) এর মাজার, মসজিদে আল কিবলাতাইন, মসজিদে হযরত আবু বক্কর (রা.), জান্নাতুল বাকী, মসজিদে নববী, জুলহুলাইফা-মিকাত, বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) এর হাতের লেখা তাবিজ ও মাজারে পাওয়া দুটি পয়সা এবং হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.) এর মাজারের মাটি।

মসজিদটির ভেতরে প্রায় দেড় হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। বাইরের অংশে আরো ৫ হাজার। রয়েছে নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা নামাজের স্থান। আর ঈদের জামাতে পুরো ঈদগাহ কমপ্লেক্সে ২০ হাজার মানুষের জমায়েত হয়ে থাকে।

স্থানীয় বাসিন্দা সরদার সোহেল জানান, এই মসজিদটি বরিশালকে বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরেছে। এর খ্যাতি গোটা দেশে যেমন ছড়িয়ে পড়েছে তেমনি দেশের বাইরের মানুষদেরও আকৃষ্ট করেছে মসজিদটি। মসজিদটি শুধু দেখতেই নয় এর ভেতরে এতো ‘আধুনিক শব্দের’ ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। যে ব্যক্তি জামাতে দাঁড়িয়ে দুই ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে তার বার বার নামাজ পড়তে মন চাইবে এখানে।

মসজিদের ইমাম হাফেজ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এই মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে মুসল্লিরা। পাশাপাশি বরিশালের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাতের একটি এই কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়। দিনে দিনে যেমন মুসল্লি বাড়ছে তেমনি মসজিদের শৈল্পিকতা ও এখনাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় পরিবেশ দেখতে সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও বাড়ছে।

তিনি আরো বলেন, এ মসজিদের পাশেই রয়েছে প্রতিষ্ঠাতা এস সরফুদ্দিন আহমেদের মায়ের নামে একটি এতিমখানা। সেখানে রয়েছে একাধিক শিক্ষার্থী। মসজিদ কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা গোরস্থানে অসহায়-গরিবদের জন্য রয়েছে কবরের ব্যবস্থা।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *