শিরোনাম

বরিশালের শেবাচিম হাসপাতালে ব্যাংকের শাখা, বেড সংকটে রোগী

Views: 107

এস এল টি তুহিন,বরিশাল :: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে শয্যার চরম সংকট থাকলেও মেডিসিন বিভাগের দুটি কক্ষে ব্যাংক বসিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ২০ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় মেঘনা ব্যাংকের একটি শাখা স্থাপন করা হয়েছে। এ ব্যাংকে হাসপাতালের কর্মকর্তা, কর্মচারী, চিকিৎসকদের বেতনও আসে না। এমনকি লেনদেনে রোগীদের জন্য কোনো সুবিধাও নেই। তাহলে কি প্রয়োজনে তুলনামূলক নতুন ব্যাংকের শাখা বসানো হয়েছে— এ প্রশ্ন সবার মাঝে।

বরিশাল বিভাগ ও আশপাশের রোগীদের উন্নত চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ১০০০ শয্যার এই হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংকটের পাশাপাশি স্থান সংকট তীব্র। হিসেবে বলছে, বহির্বিভাগে প্রতিদিন ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। জরুরি বিভাগে ৫৫০ থেকে ৬০০ রোগী চিকিৎসা নেন। এর বেশিরভাগই আবার ভর্তি হন দিনে। ফলে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল হলেও দুই থেকে আড়াই হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকেন।

রোগীর চাপ সামলাতে ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর নির্মাণাধীন নতুন ভবনে মেডিসিন ইউনিট স্থানান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই ভবনেও রোগীর চাপ থাকায় মেঝে, বারান্দা ও টয়লেটের সামনে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে রোগীদের। কিন্তু পাঁচতলার এই ভবনের নীচ তলায় বড় বড় দুটি রুমে মেঘনা ব্যাংককে শাখা হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

ছবি: চন্দ্রদীপ নিউজ

কলাপাড়ার আলীপুর থেকে আসা জসিম উদ্দিন বলেন, তিনদিন ধরে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে দুটি রুমে ব্যাংককে দিয়েছে ওখানে রোগী থাকলে কিছুটা চাপ কমতো।

উজিরপুরের ওটরা ইউনিয়নের ইমন বলেন, মেডিসিন ভবনের নিচতলায় যে ব্যাংক বসিয়েছে তাতে মানুষের কোনো উপকার হয় না। কেউ ওখান থেকে টাকা তুলেও না আবার জমাও দেন না। শুধু শুধু দুটি রুম আটকে রাখা হয়েছে।

আরেক রোগী রুনু বেগম বলেন, হাসপাতালটাকে সবাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বানিয়ে ফেলেছে। মানুষ দাঁড়ানোর জায়গা পান না অথচ তারা সুন্দর ব্যাংক বসিয়ে ভাড়া তুলছে। এসব সরকারের দেখা উচিত। এভাবে সরকারি হাসপাতাল চলতে পারে না।

ছবি: চন্দ্রদীপ নিউজ

বরিশাল নগর উন্নয়ন ফোরামের সমন্বয়কারী কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীরা ঠিকভাবে থাকতে পারেন না। অত্যন্ত কষ্ট করে চিকিৎসা নিতে হয়। এই স্থান সংকটের মধ্যে সরকারি ভবন বেসরকারি ব্যাংকের কাছে ভাড়া দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রমাণ করেছে তাদের কাছে রোগীর চেয়ে ব্যাংক বসানোটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধনও করেছি। কিন্তু রোগীর কল্যাণে আশানুরূপ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মেঘনা ব্যাংকের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখার ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম জানান, রোগীদের জন্য আসলে ব্যাংকে বাড়তি কোনো সুবিধা নেই। সাধারণ গ্রাহক যেমন সেবা পাবেন ঠিক সেই সেবাই পাবেন একজন রোগী। তিনি জানান, ২০২৩ সালে চালু করা হয় এই শাখাটি।

কেন মেঘনা ব্যাংকের শাখা হাসপাতালে?::

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালটির বর্তমান পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলামের ছোট ভাই মনির হোসেন মেঘনা ব্যাংকের কর্মকর্তা পদে রয়েছেন। তার চাকরি স্থায়ী করন ও ম্যানেজার পদে পদোন্নতির জন্য মেঘনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চাহিদার প্রেক্ষিতে হাসপাতালে শাখা খোলার অনুমতি দেন পরিচালক এইচএম সাইফুল ইসলাম। শাখা চালু হওয়ার পরে মনির হোসেন এই শাখায় যোগ দিলেও সমালোচনার মুখে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে অন্য শাখায় বদলি করে নেন। যদিও এ বিষয়ে মনির হোসেনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ছবি: চন্দ্রদীপ নিউজ

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালগুলোর নতুন ভবন নির্মাণে নকশা রয়েছে ব্যাংকের জন্য। এতে করে মানুষ আরও দ্রুত সেবা পাবেন। নতুন পদ্ধতিতে রোগীর অর্থনৈতিক লেনদেন সব থাকবে ব্যাংকের সঙ্গে। ব্যাংকের সাথে লেনদেনের এই অটোমেশন পদ্ধতির অ্যাপ আমাদের প্রস্তুত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করা আছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই আমরা অটোমেশন পদ্ধতিতে রোগীর চিকিৎসা সেবা দেব। এতে রোগীর ভোগান্তি কমবে, সরকার সরাসরি টাকা পাবে।

সরকারি ব্যাংক থাকতে বেসরকারি ব্যাংক কেন ভাড়া দেওয়া হলো প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা সরকারি, বেসরকারি আরও অনেক ব্যাংকে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু মেঘনা ব্যাংক ছাড়া কেউ সারা দেয়নি। এজন্য তাদেরই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, হাসপাতালের সকল চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন সোনালী ব্যাংক শহীদ মিনার শাখার মাধ্যমে আসে। সম্প্রতি আউটসোর্সিংয়ে নিযুক্ত লোকবলের সম্মানী মেঘনা ব্যাংকের এই শাখায় আনা হচ্ছে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *