শিরোনাম

বরিশালে অবৈধ যানে কোটি টাকার বাণিজ্য

Views: 26

বরিশাল অফিস :: বরিশাল জেলার নগরীতে আস্মিক ভাবে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যানজট। বরিশালের বিভিন্ন সড়কে যানজটের তীব্রতায় চরম ভোগান্তীতে পরছে নগরবাসী। এ যানজটের মূলে রয়েছে ধারণ ক্ষমতার প্রায় পাঁচ গুন বেশী যানবাহন। তবে মোট যানবাহনের পাচঁ গুনই অবৈধ। বিগত দিনে ক্ষমতাশীন দলের ছত্রছায়ায় এ সকল অবৈধ যানবাহন ব্যাপক বিস্তার ঘটায় নগরজুড়ে।

এ সকল অবৈধ যানবাহনের অধিকংশ মালিক-ই আ’লীগ নেতারা। আর বাকি অবৈধ যানবাহন চলে পুলিশ বিটের মাধ্যমে। বর্তমানে ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম কিছুটা ঢিলেঢালা হওয়ার কারণে এসকল অবৈধ যানবাহন বীরদর্পে দাফিয়ে বেরাচ্ছে নগরী। সরকার পতনের পরে বরিশাল জেলার গাড়ি গুলোও ঢুকে পরেছে নগরীর মধ্যে। এদের কোন ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। অপরদিকে রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনের বিভিন্ন দালাল দিয়ে প্রতি মাসে কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য হয় এ অবৈধ যানবাহন দিয়ে।

পরিসংখ্যাণ অনুযায়ী বরিশাল মহানগরীতে বৈধ গণপরিবহনের চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। বিআরটিএ’র অনুমোদিত ২ হাজার ৫০০ সিএনজি চালিত অটোরিকশার বিপরীতে প্রায় ১৫ হাজার ইজিবাইক চলাচল করায় নৈরাজ্য দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি পায়ে চালিত রিকশা গুলোতেও মোটর যুক্ত করা হচ্ছে এবং সেগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো বরিশাল শহর অবৈধ যানে কোটি টাকার বাণিজ্য জুড়ে। এই মোটরচালিত রিকশার সংখ্যাও ইজিবাইকের কাছাকাছি।

ফলে কেবল বরিশাল মহানগরীতে বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে ৩৮ হাজারেরও বেশি গণপরিবহন চলাচল করায় যানজটে নাকাল হচ্ছে নগরবাসী।

পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার প্রায় ৪০০ কিলোমিটার পাকা সড়কের জন্য ইজিবাইকের ২ হাজার ৬৯০টি লাইসেন্সের নবায়ন বন্ধ রয়েছে ২০১৯ সালের জুন মাস থেকে। বিগত ২২ সালে সিটি করর্পোরেশন নবায়ন বন্ধ রাখা ইজিবাইকের লাইসেন্সের জন্য ফরম বিতরণ কার্যক্রম চালু করে। তৎকালীন সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ সহ তার অনুসারীরা কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

বরিশাল করপোরেশনের রাজস্ব শাখা সূত্র জানায়, এক সপ্তাহে প্রায় ১০ হাজার ইজিবাইক চালক এই ফরম সংগ্রহ করেছেন। ফরম বিতরণ শেষে তা যাচাই-বাছাই করে লাইসেন্স দেয় সিটি করর্পোরেশন। বিআরটিএ কিংবা সিটি করর্পোরেশন কোনো কর্তৃপক্ষই লাইসেন্স না দেওয়ায় প্রতিনিয়ত ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে এসব অবৈধ যানবাহন চালকদের সঙ্গে।

বরিশাল মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, বিআরটিএ কর্তৃক লাইসেন্সপ্রাপ্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশা, অবৈধ ইজিবাইক, মোটরচালিত রিকশা ও থ্রি-হুইলার (মাহিন্দ্র) পুরো মহাসড়ক দাবড়ে বেড়াচ্ছে। দ্রুত গতির যানবাহন এত বেশি চলাচল করায় দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ। অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে যানজট তো নিত্যদিনের ঘটনা। মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা অবৈধ যানবাহন রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিলেও বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কারণে তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এসব যানবাহনের চালকরা।

প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে এসব অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা গত কয়েক বছরে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঝেমধ্যে মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগ এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য জরিমানা ধার্য কিংবা আটকের চেষ্টা করলেও তাতে কোনো সুফল আসছে না। ট্রাফিক বিভাগের জরিমানার হাত থেকে রেহাই পেতে এসব অবৈধ যানবাহন বিভিন্ন সংগঠন, সাংবাদিক, পুলিশসহ প্রভাশালীদের ছত্রছায়ায় চলাচল করছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, বৈধ ও অবৈধ এসব যান ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ, মালিক সমিতি, শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়নের ব্যানার, বিভিন্ন পত্রিকার স্টিকার ব্যবহার করে নগরীতে চলাচল করছে। অধিকাংশ মালিক ও চালক সড়কে ‘প্রশাসনিক হয়রানি’ থেকে রেহাই পেতে প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা মাসোহারা দিয়ে সড়কে গাড়ি চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব গণপরিবহনের অধিকাংশ বিআরটিএর অনুমোদিত না হওয়ায় চালকরাও লাইসেন্সপ্রাপ্ত নয়। আর অদক্ষ এসব চালকের কারণ প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

বিআরটিএর বরিশাল পরিচালক মো. জিয়াউর রহমান জানান, ইজিবাইক সরকার কর্তৃক অবৈধ যানবাহন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এগুলোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি বরিশাল মেট্রোপলিটনের বৈঠকে যানবাহন চলাচলের বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে এসব যানবাহন চলাচল বরিশাল সদর রোড এলাকা এবং পরবর্তী সময়ে আমতলা থেকে জিলা স্কুল মোড় পর্যন্ত আটকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়াও বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের কারখানাগুলোতে অভিযান চালিয়ে সেগুলো সিলগালা করে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাকের) সম্পাদক রনজিৎ দত্ত জানান,বরিশাল নগরীতে প্রয়োজনের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি যানবাহন চলাচল করায় ঘনঘন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। বিগত কয়েক বছরে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ না করায় দিনে দিনে এ সমস্যা আরো প্রকট হচ্ছে। অতি দ্রুত সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান মিলে সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে আগামীতে বরিশাল নগরীতে আর চলাচল করা সম্ভব হবে না। এদিকে ট্রাফিক বিভাগের অভিযানে মাঝেমধ্যে ইজিবাইক আটক হলে নানা সংগঠনের ব্যানারে মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হলে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে।

বরিশাল মেট্রপলিটন ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রুনা লায়লা বলেন, বিগত দিনে “এসকল অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। তবে আমদের সার্জেন্টরা দলীয় চাপের কারনে অনেক সমস্যায় পরতেন। আমরা আজ থেকেই অবৈধ যানবাহনের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, যে সকল
ওয়ার্কশপে অবৈধ যানবাহন তৈরী করা হয় তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা দরকার। এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করবো।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *