বরিশাল অফিস:: ভোক্তা অধিকার, বাজার মনিটরিং, ম্যাজিস্ট্রেটদের দেয়া দন্ড-জরিমানা সবকিছুই উপেক্ষিত ব্যবসায়ীদের কাছে। ওরা কাউকে মানছে না, ওরাই দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাবান তা প্রমাণ হয়ে গেছে। বাজারের পরিস্থিতি দেখে নগরীর নতুনবাজার এলাকায় সড়কে দাঁড়িয়ে এভাবেই চিৎকার করছিলেন কাউনিয়া হাউজিং এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ ফয়েজ আলী। মুরগীর দোকানীকে রীতিমতো লাঠিও তুললেন মারধর করার জন্য।
জানা গেল, একসপ্তাহ আগেও যে সোনালী মুরগির দাম ৩০০ টাকা ছিলো সেটি আজ ৩৪০ টাকা, গতরাতেও ছিলো ৩২৫ টাকা। ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট প্রতি মুহূর্তে রদবদল ঘটাচ্ছে বাজারের। গতকাল যে আলু ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে আজ তা ৪৫ টাকা, ২০ টাকার বেগুন এই মুহূর্তে বরিশালের পোর্ট রোড বাজারে ৪০ টাকা এবং পিয়াজ ৫৫ টাকা। কাঁচামরিচ আবারও লাগাম খুলে ছুটতে শুরু করেছে। আটা ৫৮-৬০ টাকা, সেমাই ৩০-৪০ টাকা প্যাকেট। গরম মসলার বাজার আকাশ ছোঁয়া।
পদ্মাবতী রোডের গৃহিণী নাজমা বেগম বলেন, আগে তবুও ৫০ টাকার গরম মসলা চাইলে কয়েকপদ যেমন লবঙ্গ, এলাচ, জিরা ও দারুচিনি মিলিয়ে পোটলা করে দিত। এখন ১০০ টাকার চাইলেও দোকানদার এমনভাবে তাকায় যেন মহা অপরাধ কিছু বলছি।
এদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশন ও মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে জিলাস্কুল মোড়, জেলখানা, কাটপট্টির মোড়ে কঠিন নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করায় চকবাজারের ব্যবসায়ীদের সুবিধা হলেও আশেপাশের এলাকা ও কলোনির বাসিন্দাদের পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, সিটি করপোরেশনের ও পুলিশ চকবাজারের ব্যবসায়ীদের সুবিধা করে দিতে গিয়ে আমাদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে। এই সড়কতো এর আগে অনওয়ে করে দিতো, কখনো একদম বন্ধ হয়নি আগে। এখানেও ব্যবসায়ী, পুলিশ ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের।
যদিও এসব বিষয়ে কান না দিতে পরামর্শ দেন স্থানীয় মহসিন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবী গত রাতের বৃষ্টিতে পোর্ট রোডে অবস্থা তুলে ধরুন। কর্দমাক্ত এই সড়কটির ছবি তুলে মেয়র মহোদয়কে দেখান।
৮ এপ্রিল সোমবার নগরীর জর্ডন রোড, ডিসি রোড ও পোর্ট রোডকে ঘীরে ত্রিমুখী দীর্ঘ যানজটে আধাঘন্টা আটকে থাকার পর পোর্ট রোডে প্রবেশ মাত্রই পুনরায় যানজট। পায়ের নীচে কর্দমাক্ত সড়কের খানাখন্দে জমাট পানির ফিনকি ছিটে নষ্ট কাপড়। মাছ আর মাংসের বাজারে তখন রীতিমতো মারামারি আর ঝগড়াঝাটি চলছে। মহিলারা সবাই ছুটে বেরিয়ে আসছেন বাজরের ভিতর থেকে। কি ব্যাপার? উঁকি দিয়ে দেখা গেল গণহারে ছেড়ে রাখা কালো ও অস্ট্রেলিয়ান গরু যা নগরীর সব সড়কের বারোটা বাজিয়ে এবার এসে ঢুকে পড়েছে পোর্ট রোড বাজারে। আর এদের তাড়াতে গিয়ে তৈরি হয়েছে আরেক বাজার। গরুর মাংস ৮০০ টাকা একদর। চাল, তেলের দাম বাড়েনি কোথাও, তবে অন্যসব ঈদ উপকরণ চিনি, সেমাই, ডিম, মুরগী এখন গরীবের নাগালের বাইরে চলে গেছে। নগরীর বাংলা বাজার এলাকার বাংলা বাজার ষ্টোরেতো আলু, ডিম ও চিনির দাম নিয়ে রীতিমতো ঝগড়া শুরু হয়েছে ক্রেতার সাথে। এখানের
কয়েকজন বিক্রতা বললেন, মাঝেমধ্যেই ভোক্তা অধিকার বা বাজার মনিটরিং কমিটি এসে এটা ওটা খুঁত ধরে জরিমানা করে। এই জরিমানা আমরা ভোক্তাদের থেকেই আদায় করে নেবো।
এ ধরনের অভিযোগ অসংখ্য বলে স্বীকার করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের বরিশালের উপ পরিচালক অপূর্ব অধিকারী। তিনি বলেন, ঈদের বাজার, মালামালের কমতি এরকম অসংখ্য অজুহাত। গৌরনদীর বাজার ঘুরে কোথাও অনিয়ম পাচ্ছিনা, কিন্তু বুঝতে পারছি সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। প্রায় একই কথা বরিশালের জেলা প্রশাসনের।
বাজার মনিটরিং কমিটির সদস্য কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট জানালেন, তারা যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই কিছু না কিছু অনিয়ম দেখছেন এবং জরিমানাও করছেন। কিন্তু মানুষের নৈতিকতার পরিবর্তন না হলে আমাদের আর করণীয় কি আছে বলে হতাশা প্রকাশ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মনদীপ ঘরাই।