ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক জগতের প্রতি আগ্রহী সাদ্দাম মাল আজ দেশব্যাপী পরিচিত একটি কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তার জন্ম পটুয়াখালীর কুয়াকাটার হোসেনপাড়া এলাকায়, যা এখন দেশের অনেকের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে। বর্তমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক এবং ইউটিউবের মাধ্যমে সাদ্দাম মাল তার অভিনয় এবং কনটেন্ট তৈরি করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। বিশেষত, তার অভিনীত আঞ্চলিক ভাষার কনটেন্টগুলো প্রায়ই ভাইরাল হয়ে চলে আসে।
শৈশব থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া সাদ্দাম মাল একসময় স্থানীয় কুয়াকাটা শিল্পী গোষ্ঠীতে যোগ দেন। সেখান থেকে শুরু হয় তার অভিনয়ের যাত্রা। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে অভিনয়ের প্রতি অদ্ভুত এক আকর্ষণ ছিল, যা তাকে স্থানীয় সাংস্কৃতিক মঞ্চে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে প্রেরণা দিয়েছে। পরে, ২০০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি জাতীয় পর্যায়েও তার অভিনয়ের দক্ষতা প্রমাণ করেন, বিশেষ করে “নকশী কাথাঁর মাঠ” নাটকে তার দারুণ ভূমিকা ছিল।
আঞ্চলিক ভাষায় কনটেন্টের মাধ্যমে সাফল্য :: তবে সাদ্দাম মালের জীবনে বড় পরিবর্তন আসে কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে। তার ভাতিজা আবু বকর, ছোট ভাইরা এবং আরও কয়েকজন স্থানীয় যুবক মিলে সাদ্দাম মালকে পরামর্শ দেন আঞ্চলিক ভাষায় কনটেন্ট তৈরি করতে। সাদ্দামের ভাষায়, “এটা ছিল সোনালী সুযোগ, যেখানে নিজের ভাষা, নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেলাম।” কুয়াকাটায় শুটিং শুরু হওয়া কনটেন্টগুলো প্রথমে স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে, কিন্তু পরে ধীরে ধীরে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় তৈরি এসব কনটেন্ট ফেসবুক ও ইউটিউবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সাদ্দাম মাল তার কনটেন্টে এমনভাবে অভিনয় করেন যে, দর্শকরা নিজেকে তার চরিত্রে দেখতে পায়। তার বিশেষ কনটেন্ট “ক্রিমিনাল জামাই” দর্শকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, যেখানে তিনি মোতালেব নামক চরিত্রে অভিনয় করেন। তার এই চরিত্রটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, সেই নামেই তাকে পরিচিতি লাভ করতে হয়।
শো-বিজে সাদ্দাম মালের যাত্রা :: তবে কনটেন্ট তৈরি করেই থেমে যাননি সাদ্দাম মাল। কনটেন্টের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে তাকে অভিনয় করার সুযোগও আসে। তিনি শাকিব খানের অভিনীত “রাজকুমার” সিনেমায় অভিনয় করেছেন, পাশাপাশি “নিথর কোলাহল”, “ভাইরাল ভাই”, “রসের হাঁড়ি বাড়াবাড়ি”, “হাউজ হাজবেন্ড ও ফাউল”, “জার্নি টু বরিশাল”, “লাল বাইসাইকেল”, “জাগরণী”, “ডিম”, “রোদ বৃষ্টির গল্প”, “ইলিশের গন্ধ”, “মেঘনার আকাশ” সহ একাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন। তার অভিনয়ের প্রতিভা এবং কনটেন্ট নির্মাণের দক্ষতার কারণে সাদ্দাম মাল এখন একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা।
সাদ্দাম মাল শুধু অভিনেতা নন, তিনি একজন দক্ষ কনটেন্ট নির্মাতা। কনটেন্ট তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটি তার নিজের হাতে। চিত্রগ্রহণ, গল্প লেখা, শুটিং লোকেশন নির্বাচন — এসবের প্রতিটিতে তার রয়েছে বিশদ মনোযোগ। তার কনটেন্ট টিমের সদস্যরা, যেমন তার ভাতিজা এস.এম আলমাস, ছোট ভাই সাগর, আরিফ, আবু বকর, এবং আরও অনেক সহযাত্রী মিলেই এসব কাজ সম্পন্ন হয়। বিশেষত, তার ভাগিনা আলমাস, যিনি চেয়ারম্যান চরিত্রে অভিনয় করেন, সাদ্দাম মালের সঙ্গে কাজ করার এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা লাভ করেন।
সাদ্দাম মালের কাছে তার দর্শকদের প্রতি এক ধরনের কৃতজ্ঞতা রয়েছে। তিনি বলেন, “আমার এই যাত্রা সম্ভব হয়েছে আমার দর্শকদের ভালোবাসায়। তাদের ভালোবাসা আমাকে সাফল্যের পথ দেখিয়েছে।” এখন তিনি আরও নতুন প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে চান। তার পরিকল্পনা হল, আরও বেশি ভালো কনটেন্ট তৈরি করা, যাতে মানুষ আরও বেশি উপকৃত হতে পারে। এছাড়া, তিনি নিজ অঞ্চলে, কুয়াকাটায় আরও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড গড়ে তুলতে চান এবং তার কর্মজীবনকে সামনের দিকে আরও বিস্তৃত করতে চান।
এখন সাদ্দাম মাল কনটেন্ট নির্মাণকে তার পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজের এবং তার সহকর্মীদের ভালোভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বর্তমানে সাদ্দাম মাল তার পরিবার, সহকর্মী এবং টিমের সদস্যদের সঙ্গে মিলে প্রতিটি কাজের মধ্য দিয়ে তার পেশাগত লক্ষ্য পূরণ করছেন। তার মতে, “এই কাজই আমার জীবনের মুল অনুপ্রেরণা। আমি চাই আমার কাজের মাধ্যমে দেশের মানুষের মাঝে প্রভাব ফেলতে এবং ভালো কিছু উপহার দিতে।”
অবশ্যই, সাদ্দাম মাল চান তার এই কাজের মাধ্যমে দেশবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিতে এবং একদিন একজন ভালো কৃষক হয়ে মাটি ও মানুষের মাঝে মিশে থাকতে।
মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম