বরিশাল অফিস:: বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে আসামিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। পাশাপাশি এই ঘটনার তদন্তে বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় এই তদন্ত কমিটি করা হয়। বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে রোববার রাতে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় এ ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম আরিচুল হক এ তথ্য জানান।
ওসি জানান, বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার মো. নুর-ই আলম সিদ্দিকী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার একমাত্র আসামি করা হয়েছে হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন আসামি তরিকুল ইসলামকে (২৫)।
হত্যা মামলার আসামি তরিকুল ইসলাম মানসিক বিকারগ্রস্ত ছিলেন। তাঁকে মানসিক ওয়ার্ডে না রেখে কারা কর্তৃপক্ষ অন্য আসামিদের সঙ্গে প্রিজন সেলে রাখেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একটি সূত্র : পটুয়াখালীর গলাচিপা থানার অপর একটি হত্যা মামলার আসামি তরিকুল। তিনি গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া গ্রামের মোশারেফ সিকদারের ছেলে। মামলায় তরিকুলের বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টাসহ গুরুতর ও সাধারণ জখম করার অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামি তরিকুল বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মামলার পর তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
নিহত আসামির নাম মোতাহার হোসেন (৬০)। তিনি বরগুনার বেতাগী উপজেলার কাউনিয়া গ্রামের রফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি বরগুনার একটি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। এ ঘটনায় আহত অজিত মণ্ডল নামের অপর এক আসামি হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। আহত অজিত একটি চুরি মামলার আসামি। তিনি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার রাজারচর গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, পটুয়াখালীর গলাচিপা থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তরিকুল ইসলাম পটুয়াখালী কারাগারে ছিলেন। পরে চিকিৎসার জন্য তাঁকে ৬ এপ্রিল বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তাঁকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। ওই হাসপাতালের প্রিজন সেলে মোতাহার ও অজিতও চিকিৎসাধীন ছিলেন।
গত রোববার ভোরে প্রিজন সেলে তরিকুল অপর দুই আসামি মোতাহার ও অজিতের সঙ্গে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় লিপ্ত হন। একপর্যায়ে তরিকুল উত্তেজিত হয়ে স্যালাইন ঝুলিয়ে রাখার লোহার স্ট্যান্ড দিয়ে মোতাহার ও অজিতকে পিটিয়ে আহত করেন। কারারক্ষীরা আহত দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। এর মধ্যে মোতাহার চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন দুপুরে মারা যান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলার প্রিজন সেলের দায়িত্বে ছিলেন একজন নায়েক ও দুজন কনস্টেবল। প্রিজন সেলের ওই কক্ষে তিনজন আসামি ছিলেন। রোববার ভোরে আকস্মিকভাবে হত্যা মামলার আসামি তরিকুল অপর দুই আসামিকে স্ট্যান্ড দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। এতে মোতাহারের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। অজিত আঘাত পেলেও ততটা গুরুতর নয়। ঘটনার সময় সেলের তালার চাবি নিয়ে একজন বাইরে নাশতা করতে গিয়েছিলেন। তাই দায়িত্বরতরা দ্রুত প্রিজন সেলে ঢুকতে পারেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একটি সূত্র বলছে, হত্যা মামলার আসামি তরিকুল ইসলাম মানসিক বিকারগ্রস্ত ছিলেন। তাঁকে মানসিক ওয়ার্ডে না রেখে কারা কর্তৃপক্ষ অন্য আসামিদের সঙ্গে প্রিজন সেলে রাখেন।
তবে হাসপাতালের উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা শুনেছেন ওই আসামি মানসিক রোগী ছিলেন। তবে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানেন না।
বরিশাল জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি তদন্তে বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দায়িত্বরত ব্যক্তিদের অবহেলার বিষয়টিও তদন্ত করা হচ্ছে বলে ঘটনার পর জানিয়েছিলেন বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার রত্না রায়। তবে গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে আরও কিছু জানতে তাঁকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি আর ফোন ধরেননি। অন্যরাও এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।