বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে খেজুরের গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি, রস চুরির ঘটনা বাড়ছে, যার ফলে খেজুর রস সংগ্রহে দেখা দিয়েছে বিপত্তি। গাছ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ ইটভাটার জন্য খেজুর গাছ কাটা এবং খেজুরের রস সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত উপকরণের দাম বাড়ানো। এ অবস্থায়, ঐতিহ্য ধরে রাখতে কিছু গাছি বেঁচে থাকা গাছগুলো থেকে রস সংগ্রহ করছেন, কিন্তু চুরি ও অন্যান্য সমস্যার কারণে সংগ্রহের পরিমাণ দিন দিন কমছে।
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার আলী হাওলাদার (৫৫) জানিয়েছেন, তিন দশক ধরে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন। তবে এখন গাছ কমে যাওয়ায় রস সংগ্রহের পরিমাণ অল্প। তিনি বলেন, একসময় এক বাড়ি থেকেই ২০-৩০ লিটার রস সংগ্রহ করা যেত, কিন্তু বর্তমানে পাঁচটি বাড়ি ঘুরলেও মাত্র ২০টি গাছ পাওয়া যায় না। গাছের মালিকদের সঙ্গে মজুরি নিয়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং ইটভাটার জন্য গাছ কাটার কারণে এই সমস্যা আরও বেড়েছে।
ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার আলমগীর হোসেন হাওলাদার জানান, তিনি গত ২০-২৫ বছর ধরে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে আসছেন, তবে বর্তমানে গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি রস চুরি এবং হাড়ির দাম বৃদ্ধির কারণে কাজ করতে আগ্রহী গাছিদের সংখ্যা কমে গেছে। তিনি আরও জানান, সড়কের পাশে গাছের রস হাঁড়িতে ঝোলানোর সাথে সাথে তা চুরি হয়ে যায়, যার ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন গাছিরা।
গাছিরা জানাচ্ছেন, রস সংগ্রহের সময় তাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। গাছের নিচে কাটা দিয়ে রস সংগ্রহ করতে হয় এবং বাদুড় থেকে রক্ষা করার জন্য মশারির কাপড় বা নেট ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এসব সতর্কতা গ্রহণের পরও অনেক সময় সঠিক পরিমাণে রস পাওয়া যাচ্ছে না, যার ফলে গাছিরা আগ্রহ হারাচ্ছেন।
একদিকে যেখানে খেজুরের রস সংগ্রহের পরিমাণ কমছে, সেখানে অন্যদিকে খেজুর রসের চাহিদাও বেড়ে গেছে। বরিশাল শহরতলীর বাসিন্দা সীমা বেগম বলেন, শীতকালে খেজুর রসের পিঠার ঐতিহ্য ছিল, তবে এখন তা কিনতে গিয়ে মনের মতো রস পাওয়া যায় না। তিনি জানান, গুড় বানানোর জন্য যে পরিমাণ রস দরকার, তা একদিনে বাজারে পাওয়া যায় না। এ কারণে খেজুর রসের পিঠা বানানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে খেজুর রসের দামও বেড়েছে, প্রতি লিটার রস বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। রসের সরবরাহ কম এবং চাহিদা বেশি হওয়ায় বাজারে এটি বিক্রি করার পর গাছিরাও লাভবান হতে পারছেন না।
মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম