শিরোনাম

বরিশালে জনপ্রিয় শরবত মলিদা

Views: 39

বরিশাল অফিস :: বরিশাল অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে জনপ্রিয় পানীয় মলিদা’র নামটি সর্বাঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। যদিও আধুনিকতার ছোঁয়ায় বড় কোনো উৎসব ছাড়া মলিদা’র আয়োজন এখন আর চোখে পরেনা।

তবে একসময় ছিল, যখন ছোট-বড় সব আয়োজনে বিশেষ করে গ্রামগুলোতে নতুন ধান ওঠা থেকে শুরু করে গোটা গরমের সময়ে বেশ জাঁকজমকভাবে মলিদা’র আয়োজন হতো। সূত্রমতে, বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব পার্বণে মলিদা’র চলন অনেক পুরোনো হলেও বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই এর সাথে পরিচিত নন। তবে কেউ কেউ এখনও সংস্কৃতি বা ঐতিহ্য ধরে রাখতে ছোট পরিসরে মলিদা খাওয়ানোর আয়োজন করে চলছেন।

মলিদা তৈরিতে মূলত নতুন পোলাওয়ের চাল, নারিকেল, আদা, লবণ, খাঁটি আঁখের গুড়, খই কিংবা মুড়ির প্রয়োজন হয়। পরিমাণের হিসেব কষলে বড় এক কাপ বাটা পোলাওয়ের চালের সাথে, কিছুটা মুড়ি কিংবা খই বাটা, বড় টেবিল চামচ নারিকেল বাটা, চা চামচ আদা বাটার সাথে পরিমাণ মতো আঁখের গুড়, লবণ মিশিয়ে ৩/৪ কাপ পানির সাথে মিশ্রণ করতে হয়। একটি পাত্রে প্রথমে পরিমাণ মতো পোলাওয়ের চাল বাটা, মুড়ি বা খই বাটা, নারিকেল বাটা ও খাঁটি আঁখের গুড় মিশিয়ে হাত দিয়ে কচলে সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে নিতে হয়। আরেকটি পাত্রে পানি দিয়ে তাতে আগের মিশ্রণগুলো অল্প অল্প করে মিশিয়ে নাড়তে হয়।

এ মিশ্রণে পানির পাশাপাশি তরল দুধ বা ডাবের পানিও ব্যবহার করেন অনেকে। সবগুলো মিশ্রণ ঢালার পর পরিমাণ মতো লবণ ও আদা বাটা দিয়ে ভালো করে নেড়ে পছন্দমতো গ্লাসে ঢেলে তার ওপর মুড়ি বা খই ছিটিয়ে অল্প নারিকেল বাটা ছিটিয়ে দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয় সুস্বাদু মলিদা।

মলিদাকে আরও সুস্বাদু করতে অনেকে চিড়া ভিজাও মিশিয়ে থাকেন। আগে মিশ্রণ ও বাটার কাজ শীলপাটা ও ঘুঁটনি দিয়ে করা হলেও এখন বেশিরভাগ জায়গায় ব্লেন্ডার করে তৈরি করা হয়। যদিও চাল বাটার কাজটি শীলপাটায় করলে স্বাদটা অনেক ভালো হয়ে থাকে। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মৌরিন আক্তার আশা মনি বলেন, মলিদা বরিশাল অঞ্চলের মানুষের কাছে জনপ্রিয় একটি পানীয়। যা শরীরকে খুবই শীতল করে এবং একটি আরামদায়ক ভাব তৈরি করে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি এ খাবারটি সাধারণত নতুন ধান উঠলে কিংবা রমজান ও ঈদ কোরবানিতে খাওয়া হতো। এখন বড় উৎসব ছাড়া আর মলিদা’র আয়োজন করা হয়না।

তিনি বলেন, আমার মা তার নানি-দাদির কাছ থেকে মলিদা বানানো শিখেছেন। আমি শিখেছি মায়ের কাছ থেকে। আর সেই হিসেবেই তো এটি (মলিদা) শত বছরের পুরোনো একটি খাবার। কালের বিবর্তনে অনেকটা হারিয়ে যেতে বসা এসব খাবার নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বেশি বেশি গ্রামীণ ও উদ্যোক্তা মেলার আয়োজন করা উচিত জানিয়ে নারী উদ্যোক্তা ডাঃ শাহনাজ রুবী বলেন, মলিদা এমন একটি জিনিস, যা তৈরির পর নবান্নের মতো আলাদা একটি স্মেল বা ঘ্রাণ আশপাশে ছড়িয়ে পরে।

এটি স্বাস্থ্যসম্মত, কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। খাওয়ার পর শরীরে অনেকটাই সতেজতা ভাব চলে আসে। তিনি আরও বলেন, কোমল পানির আড়ালে এই ঐতিহ্যবাহী পানি যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।

নিজেদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিষয়গুলো জানতে হবে, ধারণ করতে হবে এবং সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *