বরিশাল অফিস:: রমজান মাসকে ঘিরে বরিশালে জমে উঠেছে জিয়াল মাছের একমাত্র পাইকারি বাজার। শিং, মাগুর, কৈ, শোল, পুটি, খইলশার ছড়াছড়ি এ বাজারে। বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়শার হাটে একমাত্র জিয়াল মাছের বাজার।
প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা এবং রাত ২টা থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত এখানে বসে দেশি মাছের হাট। এবাজারে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ১০০টন দেশি মাছ। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিল থেকে ধরে আনা এসব মাছ ঢাকা চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে দেশের বড় সব মাছের মোকামে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলেন এসব মাছের চাহিদা বাড়ে মাহে রমজানে। তাই এবাজার সকলের কাছে পরিচিত। পয়সার হাটেন জিয়াল মাছের বড় এই বাজারের কই, শিং মাগুর, পুটি, খইলশা, শোল, গজাল, ফলি, চিতল, বাইন্সহ প্রায় ৭০ ধরনের মাছের মেলা বসে এখানে।
একেবারে ব্যাক্তি পর্যায়ে গড়ে ওঠা এই বাজারে কোন খাজনা না থাকায় মাছের সাথে ঢল নামে পাইকারদের। প্রতিদিনরাতে এখান থেকে অন্তত ১০০ টন জিয়াল মাছ যায় ঢাকাসহ দুরের জেলায়।
এই বাজারের পাইকারি ব্যাবসায়ী রহমত আলী বলেন, রমজানে জিয়াল মাছের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মাছ আসার সাথে সাথে পাইকারেরা কিনে নিয়ে যায়। মাছের ওজন সঠিক হয়, দাম ন্যায্য পায় বলে পাইকার ও বিক্রেতা উভয়ে এই বাজারে চলে আসছে। বেলা দুটো বাজতেই জমে ওঠে এই জিয়াল মাছের বাজারটি। দাম নির্ভর করে চাহিদার উপর।
বরিশাল ও গোপালগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তি এই বাজারের আশেপাশের প্রায় দেড়শ গ্রামের বিল থেকে ধরে আনা এসব জিয়াল মাছের চাহিদা রমজান মাসে থাকে সবচেয়ে বেশি।
কাজলীয়া, বুনতি, কুশলা, রাজারগ্রাম, চুড়ুলিয়া, সাতলা বাগধা বইল থেকে ধরে আনা এসব মাছ স্বাধেও অনন্য। বর্তমানে শ্রেণি ও সাইজভেদে এসব মাছ ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রোজার এই সময়টায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মাছের দামও বেড়েছে। যোগান কমে গেছে মৌসুমের কারণে।
পাইকারি ব্যাবসায়ীরা আরো জানান, মাছের যোগান চাহিদার চেয়ে এখন কম তাই দাম চড়া। প্রতিটি মাছে এখন মনপ্রতি এক থেকে দুই হাজার টাকা বাড়তি। নামকরা বিল থেকে আসা এসব মাছের বাজার সব সময়ই জমজমাট। মাছের দাম প্রকারভেদে ৫০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা কেজি।
স্থানীয় অশোক কুমার জানান, স্থানীয় জিয়াল মাছের ভিন্ন বাজার গড়তে ১২ বছর আগে এখানে ৪ জন আড়তদার মিলে এই বাজারটি গড়ে তোলেন।
বর্তমানে এখানে ৮ আড়তসহ ৪১ ব্যাবসায়ি মাছ বিক্রির সাথে জড়িত রয়েছেন। বরিশাল, গোপালগঞ্জ, খুলনা মহাসড়কের রাস্তার দুধারে গড়ে ওঠা এই বাজারে পাইকারি ক্রেতার সংখ্যা প্রায় এক হাজার। কেবল সততাকে পুজি করেই এই বাজার সমৃদ্ধি পেয়েছে এবং আশে পাশের বাজারগুলো মার খেয়েছে বলে দাবি করেছেন আড়তদাররা।
এবিষয়ে ওই বাজারে মাছ আড়তদার সমিতির নির্বাহী সদস্য মো. জালাল উদ্দিন বলেন, এখানে ৪ জন থেকে এখন ৪১ জন জিয়াল মাছের ব্যাবসা করছে। আমাদের এই বাজার এতো প্রসিদ্ধ হবার মূল মন্ত্র হচ্ছে সততা। এখানে দেশি মাছ দেশি এবং চাষের মাছ চাষ বলে বেচাকেনা হয়। অনেকটা ক্রয়ের নিশ্চয়তা পাওয়ায় এ বাজারের সামনে অন্য বাজারগুলো মার খেয়েছে। নিজস্ব নিয়মে পরিচালিত এ বাজারে কোন চাঁদাবাজ ও খাজনা নেই। বাজারের শৃংখলার জন্য কোন পুলিশও প্রয়োজন হয়না। আর তাই প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার সাথে মিল থাকায় রাস্তার পাশের এক সময়ের ক্ষুদ্র এই বাজারটি এখন দক্ষিণের একমাত্র জিয়াল পাইকারি বাজারে পরিণত হয়েছে।
পয়শারহাট জিয়াল বাজারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বাবুল শেখ বলেন, আমরা গভির রাত পর্যন্ত ব্যবসা করি নিজস্ব নিরাপত্তায়। এ বাজারের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ লাগে না। খাটি মাছ বিক্রি হয় বলে সবাই সহযোগিতা করে। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে কোন খাজনাও আরোপ করা হয় না। এখানে মাস্তান চাঁদাবাজির কোন স্থান নেই। এবাজারে দিন ও রাতে ৬ ঘণ্টায় অন্তত ২০ লক্ষ টাকার মাছ কেনাবেচা হয়ে থাকে।