বরিশাল অফিস :: রাজধানীসহ সারা দেশের সাথে বরিশাল অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের মূল সেতুবন্ধন ৮ নম্বর জাতীয় মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি আবার নতুন করে অনিশ্চয়তার কবলে। অর্থ বরাদ্দ থাকার পরেও সময়মত ভূমি অধিগ্রহণের কাজটি এখনো সম্ভব হয়নি। ব্যয় বরাদ্দ দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি করে একটি প্রস্তাবনা সম্প্রতি একনেক সভায় উপস্থাপনের কথা থাকলেও তা ফেরত পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন বলে জানা গেছে।
বরিশাল-ফরিদপুর ও বরিশাল-পায়রাবন্দর-কুয়াকাটা মহাসড়কটির ওপরই সারা দেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলার সড়ক পরিবহন নির্ভরশীল।
প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘পদ্মা সেতু ও সংযুক্ত এক্সপ্রেসওয়ে’র সুফলও নির্ভর করছে ফরিদপুর-বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কটি উন্নয়নের ওপর। ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরে বরিশাল অঞ্চলের জাতীয় এ মহাসড়কটি ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের বাড়তি চাপ ইতোমধ্যে দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি সহ নানা বিড়ম্বনার সৃষ্টি করছে। এমনকি বাড়তি যানবাহনের কারণে এ মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটার মহাসড়কে যানবাহনের গতি এখন অনেক ধীর। ফলে আগের চেয়ে বাড়তি সময় লাগছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২১১ কিলোমিটার দীর্ঘ বরিশাল-ফরিদপুর ও বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা জাতীয় মহাড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সহ পথ নকশা তৈরি করা হয়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ ও সমীক্ষার পথ নকশা অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণে ১৮শ ৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে ২০১৮ সালে একটি আলাদা প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত চাহিদার অর্ধেক ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়নি।
বরিশাল মহানগরীর পরিবর্তে প্রায় ১৬ কিলোমিটার বাইপাস নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ায় সে ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পটুয়াখালীতেও পথ নকশায় কিছু পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এছাড়া বরিশাল বিমান বন্দর ডাইভার্শন ও ফরিদপুরে একটি প্রতিবন্ধী স্কুলের পুনর্বাসনেও অতরিক্ত অর্থ ব্যয় হবে। সব মিলিয়ে আরো অন্তত ২শ হেক্টর বাড়তি ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় ৫ হাজার ৮শ কোটিতে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে ‘সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা-ডিপিপি’ সড়ক অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয় হয়ে পরিকল্পনা কমিশনে উপস্থাপনের পরে তা অনুমোদন না দিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রোববারই বৈঠকে বসছেন উপদেষ্টা।
জমির বর্তমান বাজার মূল্য দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি সহ নতুন পথ নকশা অনুযায়ী ৩ হাজার ৭শ হেক্টর জমির মূল্য পরিশোধে বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছে সড়ক অধিদপ্তর। এ পর্যন্ত বরিশাল সড়ক বিভাগের ৩৩ কিলোমিটার ও মাদারীপুর অংশে মাত্র ৭ কিলোমিটার অংশে ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে অধিগ্রহণকৃত ভূমির অর্থ পরিশোধ হলেও সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে অধিগ্রহণ বাবদ বরাদ্দকৃত ৮৯০ কোটি টাকার পুরোটাই ফেরত গেছে বলে জানা গেছে। ফলে গত প্র্রায় ৭ বছরে বরিশাল-ফরিদপুর ও বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কটির ভূমি অধিগ্রহণের অগ্রগতিও তলানিতে।
তবে কি করণে নির্ধারিত সময়ের ৩ বছর পরেও ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়নি এর জবাব নেই কারো কাছে। সড়ক অধিদপ্তরের বরিশাল জোনের দায়িত্বশীল মহলের মতে ভূমি অধিগ্রহণ একটি জটিল বিষয় হলেও এত দীর্ঘ সময় ব্যয় হওয়ার কথা না। তাদের মতে ৬টি জেলার জেলা প্রশাসন এ ভূমি অধিগ্রহণের সাথে জড়িত। বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসনের ল্যান্ড এক্যুইজিশন দপ্তর সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে অনেক কিছু পিছিয়ে গেছে।
অপরদিকে ২০১৫ থেকে ’১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও পথ নকশা অনুযায়ী ২১১ কিলোমিটার মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণে ২১ হাজার কোটি টাকার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হলেও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ইতোমধ্যে নতুন করে সব কিছু করতে বলেছে। এডিবির অর্থে ইতোপূর্বে সমীক্ষা ও পথ নকশা প্রস্তুত হলেও দাতা সংস্থাটি আগের সবকিছু সংশোধন করে নতুন করে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সহ নকশা প্রনয়ন করতে বলছে। দাতা সংস্থাটি এ প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে বলেও জানা গেছে।
তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভূমি অধিগ্রহণ সহ পরিপূর্ণ ডিপিপি প্রণয়ন এবং চূড়ান্ত অনুমোদন না করায় এডিবির পক্ষ থেকেও বাড়তি কোন আগ্রহ দেখানো হচ্ছে না। নতুন পথ নকশা ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষার লক্ষ্যে গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে ধীর গতিতে কাজ চলছে। কবে নাগাদ এসব বিষয় চূড়ান্ত হবে তা বলতে পারেনি সংশ্লিষ্ট মহল। তবে পরিকল্পনা কমিশনের উচ্চ পর্যায় থেকে ইতোপূর্বে সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী-এডিপি’র সবুজ পাতায় ‘ফরিদপুর-বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি অন্তর্ভূক্তির ব্যাপারে সড়ক অধিদপ্তর সহ সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল মহল আশাবাদী।