বরিশাল অফিস :: আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে বরিশালে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঢাক-ঢোলসহ বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারিগররা। তবে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুব একটা লাভ না হওয়ায় ঋণ সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তারা। এ পেশার সাথে জড়িতদের অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান, বরিশাল জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা।
দুর্গাপূজা মানেই আনন্দ। আর এ আনন্দের অন্যতম উপকরণ ঢাক-ঢোলসহ নানা বাদ্যযন্ত্র। তাই এ সব বাদ্যযন্ত্র তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কারিগররা। ঠুক-ঠাক শব্দে ভোর হতে রাত পযর্ন্ত শক্ত কাঠ কেটে নানা রকমের ঢাক-ঢোল তৈরি করছেন কারিগররা। নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে এসব বাদ্যযন্ত্র যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। তবে প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ পেশার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকে।
নগরীর বাকলার মোড় সংলগ্ন বাজার রোড ঢাক তৈরি করা দোকানগুলোতে ঘুরে দেখাগেছে, শারদীয় দুূর্গোৎসবের প্রধান আকর্ষণই হচ্ছে ঢাক। আর তাই ঢাক তৈরী ও মেরামত করতে বরিশালে ব্যস্ততম সময় পার করছেন ঢাক তৈরী কারিগর ও ঢাকিরা।
শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে ঢাক তৈরি কারিগররা ঢাক থেকে শুরু করে সকল প্রকার শব্দ যন্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই হিন্দু ধর্মাবোলম্বীদের প্রধান ও সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে ঢাক বাজানো বাদ্যকার ও বিভিন্ন মিউজিক পার্টি থেকে অর্ডার নেয়া ঢাক সঠিক সময়ে সরবরাহ করার জন্য ঢাক তৈরীর কারিগর ও শ্রমিকদের এখন দিনরাত এককার হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে নগরীর বাজার রোড ‘তবলা ভূবন’-এর প্রো. শ্রী শম্ভু দাস ও ‘তাল তরঙ্গ’-এর প্রো. শ্রী মন্টু দাস জানান, যুগ যুগ ধরে ঢাক বাদ্য তৈরি ও ঢাক বাজিয়ে শতাধিক শ্রমিক বা কারিগর তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
বর্তমান আধুনিকতার যুগও প্রাচীনকালের ঢাকের প্রথাকে আজো বিলুপ্তি ঘটাতে পারেনি। বিশেষ করে দুর্গাপূজা আসলেই ঢাকের চাহিদা অনেকাংশে বেড়ে যায়। তাই ঢাক তৈরীর কারিগর ও শ্রমিকেরা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের ১২ মাসের প্রায় প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ঢুলীদের নাচ-ই হচ্ছে অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ। আর ঢাকের বাদ্য (শব্দ) ছাড়া দুর্গপূজার অনুষ্ঠানসহ হিন্দু ধর্মাবোলম্বীদের কোন অনুষ্ঠানই তেমন জমে না।
শম্ভু দাস ও মন্টু দাস জানান, বংশ পরম্পরায় বিগত প্রায় ৫০ বছর যাবৎ তারা এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের পূর্ব পুরুষ ঢাকসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র তৈরীর কাজ করে আসছেন। বর্তমান সময়ে একটি মাঝারী ধরনের ঢাক তৈরী করতে তাদের খরচ হয় প্রায় ৯ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। আর সেটি বিক্রি করছেন ১৪ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকায়। দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইতোমধ্যেই তাদের কাছে নতুন ঢাক তৈরী ও মেরামতের বেশ কিছু অর্ডার এসেছে।
শম্ভু দাস আরো জানান, চার সদস্যের সংসারে ঢাকসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও মেরামত করে তার পরিবার নিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দেই বসবাস করছেন। তবে বিগত দুই বছরের তুলনায় এ বছর ঢাক তৈরির অর্ডার অনেক ভালো।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল প্রেস ক্লাব-এর সাবেক সহ সভাপতি বীরেন সমদ্দার বলেন, শারদীয় দুূর্গোৎসবের প্রধান আকর্ষণই হচ্ছে ঢাক। সন্ধ্যা গড়ানোর সাথে সাথে ঢাকের বাদ্যে মুখরিত হয়ে ওঠে পূজামন্ডপগুলো। ঢাকের শব্দ শুনলেই বোঝা যায় মন্দিরের সম্মুখে ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।
সাংবাদিক বীরেন সমদ্দার আরো বলেন, পূজায় ঢাক-ঢোলের বাদ্য অপরিহার্য হলেও বর্তমানে সাউন্ড সিস্টেমের দাপটে ঢাকের ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। এছাড়া বেড়েছে কাঠ ও চামড়াসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম। ফলে এখন তেমন লাভের মুখ দেখছেন না বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারিগররা।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বরিশাল জেলা সহকারী সমাজ কল্যাণ পরিচালক জাবের আহম্মেদ বলেন, পূজা ছাড়াও বাংলা ও বাঙলির সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে ঢাক-ঢোল ও বাদ্যযন্ত্র। তবে পূজায় এখনও ঢাক-ঢোলের কদর রয়েছে। পূজার আরতিতে ঢাক-ঢোলের কোনো বিকল্প নেই। তাই বছরের এ সময়টাতে ব্যস্ত সময় পার করেন ঢোল-ঢোলের কারিগররা। এসব কারিগর বা শিল্পীদের পাশে দাঁড়াতে সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা চলছে।