হামলায় বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জাতীয় নাগরিক কমিটি বরিশালের কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেছে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় নগরের সোহেল চত্বরের কাছে অ্যানেক্স ভবনের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে সড়কে দায়িত্ব পালনরত পুলিশের হস্তক্ষেপে দুপক্ষকে আলাদা করা হয়।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য ডা. মাহমুদা মিতু অভিযোগ করে বলেন, আমরা মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলাম। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে নিচ্ছিলাম। হঠাৎ আমাদের ওপর হামলা করে অনুষ্ঠান পণ্ড করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বারবার জানিয়েছি, আমরা জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য। আমাদের কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু কৃষক দলের লোকজন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠক শাকিল মৃধা জানান, আমাদের আলোচনা সভার মধ্যে একদল লোক এসে ‘আওয়ামী লীগের লোক’ বলে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আমাদের ব্যানার ছিড়ে ফেলে এবং হামলা করে আয়োজন পণ্ড করে দেয়। হামলাকারীরা পুলিশের সামনেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে বরিশাল মহানগর কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান বলেন, আমরা মিছিল নিয়ে আসার পথে দেখি, জাতীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে আওয়ামী লীগপন্থিরা সড়ক আটকে প্রোগ্রাম করছে। তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে উপস্থিত লোকজন তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, জাতীয় নাগরিক কমিটি আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে কর্মসূচি করতে এলে কিছু লোকজন তাদের মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ তাদের দুপক্ষকে দুদিকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। পরে নাগরিক কমিটির লোকজন কোতোয়ালী মডেল থানায় যায়। সেখানে তাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা ছিলেন।
থানায় গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগরের সদস্য সচিব মো. শাহাদাত বলেন, ‘নাগরিক কমিটির ভাইদের ওপর হামলা হয়েছে, তাদের নেত্রীসহ কিছু ভাই আহত হয়েছেন। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই, সে সঙ্গে যারা এ হামলা চালিয়েছে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করার দাবি জানাই। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্তব্যের জায়গা থেকে আমরা এখানে (থানায়) প্রতিবাদ জানাতে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় সে জন্য এখানে এসেছি।
তিনি বলেন, যারা হামলার শিকার হয়েছেন তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, প্রশাসনের ভূমিকা ছিল পক্ষপাতদুষ্ট, কারণ তারা প্রশাসনের কাছে সাহায্য চাওয়ার পরেও তারা সাহায্য করেনি। কৃষক দল, শ্রমিক দল এবং যুবদলের পরিচয় দিয়ে বিএনপির স্লোগান দিয়ে কোনো কারণ ছাড়াই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা চালিয়েছে।
উপস্থিত পুলিশ সদস্য রাশেদ জানান, আচমকা এক পক্ষ এসে ব্যানার ছিড়ে ফেলেছে। কোনো সমস্যা হলে আমাদের বলতে পারত। আমরা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলাম; কিন্তু না বলে আইন নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে। পরবর্তী সময়ে উভয়পক্ষকে ওই স্থান থেকে আমরা সরিয়ে দিয়েছি।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা শেষে নাগরিক কমিটির সদস্য সালমান জানান, আমরা হামলাকারীদের বিচারের পাশাপাশি উপস্থিত পুলিশ সদস্য যারা হামলাকারীদের নিবারণ করেনি তাদেরও শাস্তি দাবি করেছি।
বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, দুপক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
মো: তুহিন হোসেন,
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম