বরিশাল অফিস :: অগ্নিকাণ্ড থেকে সুরক্ষায় ২০১৭ সালের মার্চে বরিশাল বিভাগের প্রায় সবক’টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে যুক্ত হয় অগ্নিনির্বাপক ৭০টি মোটরসাইকেল। চায়নাএইড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সহায়তা হিসেবে পাওয়া যায় বাইকগুলো কিন্তু গত পাঁচ বছর কোনো কাজে আসছে না সাড়ে ৬ কোটি টাকা দামের এসব অগ্নিনির্বাপক মোটরসাইকেল। সবই বিকল হয়ে ফায়ার সার্ভিসের গ্যারেজে পড়ে আছে।
প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি নেয়া সম্ভব নয়, এমন স্থানে দ্রুত আগুন নেভাতে মোটরসাইকেলগুলো দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিকল হয়ে গ্যারেজে পড়ে থাকায় সে উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।
বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফায়ারম্যান (ড্রাইভার) আনোয়ার হোসেন জানান, ফায়ার বেল বাজার সঙ্গে সঙ্গে তারা অন্তত চারটি মটরসাইকেল নিয়ে সরু গলিপথ দিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যেতেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিতেন তারা। পরে বড় গাড়ি এলে বাকি কাজ সম্পন্ন করা হতো।
২৫০ সিসি মোটরসাইকেলগুলোয় ৩৯ লিটার পানি, ১ লিটার ফোম ও ৩০ গজ পাইপ সংযুক্ত থাকায় এগুলো ব্যবহার করে দোতলা ভবন পর্যন্ত আগুন নেভানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল এর ড্রাইসেল ব্যাটারি ও চার্জার। ফায়ারম্যান লিডার ফজলুর রহমান বলেন, ‘এসব মোটরসাইকেলের ব্যাটারিগুলো ছিল ড্রাইসেল। এগুলো বেশিক্ষণ চার্জ ধরে রাখতে পারত না। এছাড়া চার্জারগুলো ছিল নাজুক। দুই থেকে চার চার্জ দেয়ার পর আর কাজ করত না। সমস্যা হলো এই ব্যাটারি ও চার্জার খোলা বাজারে পাওয়া যায় না।’
বরিশালে আসার পর প্রথম ছয় মাসে বিভাগের প্রায় ২৪৯টি অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনায় দ্রুত সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে এসব মোটরসাইকেল। তারপর থেকেই এর একে একে এগুলো অচল হয়ে পড়তে শুরু করে। ২০১৯ সাল নাগাদ সবই অচল হয়ে পড়ে।
বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের প্রধান মেকানিক হাবিবুর রহমান জানান, মোটরসাইকেলগুলো আসার অল্প সময়ের মধ্যেই সেগুলোয় সমস্যা দেখা দেয়। পরে দুবার দাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এসে পাঁচ থেকে সাতটি বাইক ঠিক করে দিয়ে যান। পরে আবারো আসার কথা থাকলেও তারা আর আসেননি। অন্যদিকে মোটরসাইকেলগুলোও অচল হয়ে পড়েছে।
অগ্নিনির্বাপক বাইকগুলোর জন্য নির্ধারিত জনবল না থাকলেও ফায়ারম্যানদের এ ব্যাপারে দীর্ঘ প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা হয়েছে। ফলে ঠিকমতো মেরামত করা গেলে এগুলোকে কাজে লাগানো যাবে। বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার রবিউল আল আমিন জানান, ফায়ারম্যানদের মধ্য থেকে মোটরসাইকেল চালকদের বাছাই করে তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এখন বাইকগুলো অপারেশনের উপযুক্ত করা গেলে সেগুলো পরিচালনায় দক্ষ জনবল প্রস্তুত রয়েছে।
মোটরসাইকেলগুলো দ্রুত মেরামত করে কর্তৃপক্ষ এগুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মন্নান।