শিরোনাম

বরিশালে ভ্যালেন্টাইন ডে

Views: 58

বরিশাল অফিস :: ঋতুরাজ্যে আগমন ঘটেছে ‘ঋতুরাজ’ বসন্তের। প্রকৃতি পুষ্পপত্রে সুশোভিত হয়ে উঠবে। দখিনা বাতাসের অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠবে নানা ফুলসহ পত্রহীন বৃক্ষ। শীতের শুষ্কতায় বিবর্ণ প্রকৃতিতে প্রাণ ফিরে পাওয়ার মতই ‘ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে’ তে ডেটিং এ মেতে উঠেছে প্রেমিক-প্রেমিকারা। তারা বাহারি ফুলের পাশাপাশি হলুদ ও বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি-শাড়ি পড়ে বর্ণনাতীত হয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারী ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিনটিকে নানাভাবে বরণ করতে দেখা গেছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ব্রজমোহন কলেজ, সরকারী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসসহ শিশু পার্কে, ত্রিশ গোডাইন নদীর পাড়, দুর্গাসাগর দিঘীর পাড়, বঙ্গবন্ধু উদ্যানে ও দপদপিয়া সেতুর উপরে এছাড়া বিভিন্ন স্থানে বাসন্তী ও হলুদ রঙের শাড়ি পরা নর-নারীরা হাতে বিভিন্ন রঙের ফুলে রঙিন হয়ে ওঠে।

বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী নিশাত,বুসরা, তুলি, কলি, ডলিসহ সাগর,ডলার ও আয়নাল বলেন, আগুন রাঙা এ বসন্ত প্রকৃতিতেই শুধু উচ্ছ্বাসের রং ছড়ায় না, রং ছড়ায় প্রতিটি প্রাণে। বসন্ত ঋতুতেই এই বৈচিত্র্য সৌন্দর্য ছড়ায়। যে সৌন্দর্য উপমাহীন। এর সাথে তুলনা চলে না অন্য কোনো ঋতুর। এমন ফুলেল সময় আর কখনো দেখা যায় না। শীতের জীর্ণতা শেষে প্রকৃতিতে যে উষ্ণতা আসে সেই উষ্ণতায় মানুষের মনও প্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে জেগে ওঠে নতুনের আহবানে। ষড়ঋতুর সর্বশেষ ঋতু বসন্ত। ঋতুর নাট্য শালায় বসন্ত কে ‘ঋতুরাজ’ বলা হয়। ফাল্গুন-চৈত্র এ দু’মাস বসন্তকাল। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বসন্তকে বরণ করেছে বাঙালির সমাজ।

বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ফারজানা আক্তার ইভা বলেন, বসন্ত আগমনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি খুলে দেয় দখিন দুয়ার। দখিনা হাওয়ায় মেতে ওঠে প্রকৃতি। পর্যায়ক্রমে এ সময়গাঁদা, মালতী, চন্দ্রমল্লিকা, মাধবী, শিমুল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, রক্তকাঞ্চন, নাগেশ্বর, অশোক, মহুয়া, ক্যামেলিয়া ইত্যাদি ফুল ফোটে। শীতের খোলসে ঢুকে থাকা এসব ফুল যেন এই বসন্তে এক অলৌকিক স্পর্শে নতুন রুপে জেগে উঠে। আমের মুকুলের সৌরভ ছড়াবে। গাছে গাছে পাতার আড়ালে লুকিয়ে মিষ্টি কণ্ঠে ডেকে আকুল হয় বসন্তের দূত কোকিল। বসন্তকাল কবি ও সাহিত্যিকের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে যুগ যুগ ধরে। যেমন- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বসন্ত নিয়ে লিখেছেন একটি গানে- ‘বসন্ত আজ আসলো ধরায়, ফুল ফুটেছে বনে বনে, শীতের হাওয়া পালিয়ে বেড়ায় ফাল্গুনী মোর মন বনে।’ বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন—‘আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে/এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়…।’ কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন—‘বসন্ত মুখর আজি/দক্ষিণ সমীরণে মর্মর গুঞ্জনে/বনে বনে বিহ্বল বাণী ওঠে বাজি…।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল নগরীর প্রাণ কেন্দ্র সদর রোডে ফুল ব্যবসায়ীরা অনান্য দিনের তুলনায় ‘ভালোবাসা দিবস’ এর দিনে ফুল ক্রয়-বিক্রয়ের হিড়িক পড়েছে। গোলাপ, রজনীগন্ধা, বেলি, হাসনাহেনা ও ডালিয়া ফুলের খোঁপা বেঁধে, কেউ ফুলের মালা দিয়ে বেণি করে, কেউবা আবার ফুলের বিভিন্ন অলংকারে সেজে ঘুরতে বের হয়েছে।

অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শহরের অলিগলিতে, বরিশাল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে চলমান মেলা প্রাঙ্গণে ও বসন্ত উপলক্ষে ভোজন রসিক বাঙালিয়ানা খাবারের রেস্টুরেন্টে স্ব-পরিবারে অংশ নিতে দেখা গেছে। সবচেয়ে জমজমাট ছিল বরিশাল সরকারী মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে।

ঘুরে দেখা যায়, সাংকৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনসহ কলেজের বাংলা, ইংরেজী, রসায়ন, সমাজকর্ম বিভাগ ও বিএনসিসি সেনা শাখার আয়োজনে নানা ধরনের পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছে। ব্যতিক্রম স্ট ছিল ‘পিঠা খাবেন?’ পিঠার মূল্য ছিল ২০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। নগরীর অন্য কলেজগুলোতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে বসন্ত উৎসব। সকাল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা আনন্দে উল্লাসে মুখরিত থাকলেও বিকাল ও সন্ধ্যা আড্ডা জমে নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। বসন্তের আগমনে সংস্কৃতি অঙ্গনও মুখর। আবার লোকমুখে ছড়িয়ে রয়েছে ‘ফুল ফুটক বা নাই ফুটুক আজ বসন্ত’ ‘প্রকৃতির সব ফুল ছিড়ে ফেললেও আজ বসন্ত’। বিশ্ব ভালবাসা দিবস উপলক্ষে বরিশালের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বিগত দিনগুলোর তুলনায় বেড়েছে নানা বয়সী বিনোদনপ্রেমী মানুষদের ভিড়।

বরিশাল নগরীর কাউনিয়া ভাঁটিখানার এলাকার বাসিন্দা নুসরাত জাহান রুপা জানান, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বরিশালের মুক্তিযোদ্ধা পার্কে ঘুরতে এসেছি। প্রিয়জনের সঙ্গে হাত ধরে ও সেলফি তুলে দিনটি স্মরণীয় করে রাখার জন্যই মূলত এখানে এসেছি। অনেক ভালো লাগছে।

বরিশাল নগরীর রুপাতলী এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান সিফাত জানান, পরিবারের সকলকে নিয়ে আজ ঘুরতে এসেছি, আমি চাকরি করি সব সময় পরিবারের সদস্যদের সময় দেওয়া হয় না। তাই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে তাদেরকে খুশি রাখতেই বিনোদন কেন্দ্র এসেছি, এখানে এসে দেখি অনেক ভিড়। পরিবারের সকলের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করে অনেক ভালোই লাগছে।

উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে ১৪০১ বঙ্গাব্দ সাল থেকে বসন্তোৎসব পালনের রীতি চলে আসছে। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। বর্তমান যুগে ফোন, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে শুভেচ্ছা বিনিময়।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *