শিরোনাম

বরিশালে মন্টু ভাইয়ের অনন্য স্বাদের চা

Views: 56

 বরিশাল অফিস :: ‘সন্ধ্যার পর মন টানে মন্টু ভাইয়ের দোকানে। এই দোকানের এক কাপ চা পান না করলে মনটা কেমন লাগে! চায়ের স্বাদ দীর্ঘসময় মুখে লেগে থাকে।’ বরিশাল নগরের সিঅ্যান্ডবি সড়কের পাশে টংঘরে মন্টু খানের চায়ের কথা এভাবেই বর্ণনা দিচ্ছিলেন মেহেদী হাসান নামে নগরের রূপাতলীর এক যুবক।

মেহেদী প্রায় প্রতিদিনই এখানে চা পান করতে আসেন। শুধু তিনি একা নন, বন্ধুদেরও সঙ্গে নিয়ে আসেন। চা পান করতে করতে আড্ডা দেন।

সম্প্রতি সিঅ্যান্ডবি সড়কের উপজেলা পরিষদের সামনে মন্টু খানের চায়ের দোকানে গিয়ে দেখা গেল, অনেক তরুণ-তরুণী বেঞ্চে বসে চা পান করছেন। সামনে অনেকগুলো মোটরসাইকেল সারবদ্ধভাবে দাঁড় করানো। মন্টু একের পর এক চা তৈরি করছেন আর তুলে দিচ্ছেন ক্রেতাদের হাতে।

মন্টু খানের চায়ের এত চাহিদা কেন, সে প্রশ্ন রাখতেই চায়ের মগে লম্বা চামচ দিয়ে ঘুটতে ঘুটতে মন্টু হাসলেন। এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘একটু চুমুক দেন। হ্যোরপরই উত্তর পাইয়্যা যাইবেন।’ কাপ থেকে গরম চায়ের ধুয়া উড়ছে। চুমুক দিতেই বোঝা গেল, কেন এই চা পান করতে দূরদূরান্ত থেকে এখানে ক্রেতারা আসেন। দুধ জ্বালাতে জ্বালাতে গাঢ় হয়ে যাওয়ায় চিনি ছাড়াই মিষ্টি স্বাদ পাওয়া গেল।

মন্টু বললেন, ‘এই যে ডেকচিতে ঘন দুধ দেখেন, এতে কোনো কিছু মিলাই না। সব গরুর খাঁটি দুধ। ব্যবসা একটু কম করি, কিন্তু জিনিসটা ভালা দিই। মানুষ আমারে বিশ্বাস করে, চায়ে ভিন্ন স্বাদ পায়। এই জন্য সবাই আসে।’

এখানে দুই ধরনের দুধ চা পাওয়া যায়। গাঢ় দুধের চা ও স্পেশাল মালাই চা। গাঢ় দুধের অর্ধেক মগ চায়ের দাম ৩০ টাকা, পুরো মগ ৫০ টাকা। আর স্পেশাল মালাই চা এক কাপ ১০০ টাকা। মালাই চায়ের বিশেষত্ব সম্পর্কে মন্টু খান বলেন, ‘দুধ জ্বালানোর পর প্রথম যে সর পড়ে, সেটা তুলে রাখি। এরপর সেই সর মিশিয়ে তৈরি হয় মালাই চা। ফলে এই চায়ের স্বাদটা অন্য রকম।’

মন্টু খানের বয়স এখন ৫১ বছর। বাড়ি উপজেলা পরিষদের সামনের গলিতে। এখানেই বাবা-চাচাদের পৈতৃক বাড়ি। তাঁর তিন ছেলে। বড় ছেলে এইচএসসি পাস করেছে। মেজ ছেলে ভোকেশনালে একাদশ শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। স্ত্রী মমতাজ সংসার সামলান আর মন্টু দোকান।

মন্টু যখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, পড়াশোনা ছেড়ে লেগে যান বাবার চায়ের দোকানের কাজে। বাবাকে সহায়তা করেন। এরপর থিতু হন এই ব্যবসায়। বিয়ের পর সংসার বড় হয়, চায়ের দোকানের আয়ে সংসার চলছিল না। তখন সিদ্ধান্ত নেন, ব্যবসার ধরন পাল্টাতে হবে। সেই অনুযায়ী মন্টু শুরু করেন বিশেষ ধরনের চা বানানো। এখন প্রতিদিন ৩০ কেজি দুধের চা বিক্রি করেন। এতে দোকানভাড়া, সব ব্যয় মিটিয়ে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা রোজগার হয়।

বিএম কলেজের শিক্ষার্থী নাইমা সুলতানা, তনুশ্রী দত্তসহ কয়েকজন বসে চা পান করছিলেন। নাঈমা বললেন, ‘আমরা বান্ধবীরা মিলে প্রায় প্রতিদিনই এখানে আসি মন্টু ভাইয়ের চা পান করতে। না হলে মনে হয়, কী যেন একটা মিস করেছি। চায়ের স্বাদ অনন্য।’ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজু রাজ বলছিলেন, ‘মন্টু ভাইয়ের মালাই চায়ের স্বাদ অতুলনীয়।’

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *