শিরোনাম

বরিশালে শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র, চ্যালেঞ্জে জাপা

Views: 73

বরিশাল অফিস:: দলীয় ভোট ব্যাংক তলানিতে থাকলেও মহাজোটের সমর্থনে ২০০৮ সাল থেকে বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনটি জাতীয় পার্টির (জাপা) দখলে। দলটির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রথমবার এমপি হন এবং পরের দু’বার হয়েছেন তাঁর স্ত্রী ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন জাহান রত্না আমিন। এবারও তিনি প্রার্থী। আসন ভাগাভাগিতে এ আসনটি জাপার ঘরে যাবে– ভোটের মাঠে স্থানীয় বিশ্লেষণ এমনই ছিল।

তবে এ হিসাব ওলটপালট হয়ে গেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম চুন্নু নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায়। অন্যদিকে ১৪ দলের আসন সমঝোতা প্রশ্নে আসনটির আরেক দাবিদার জাসদ (ইনু) প্রার্থী মো. মহসীনও আছেন শক্ত অবস্থানে। জাপাকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নে নারাজ চুন্নু ও মহসীন। এ দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলে জোটের সমর্থন পেলেও আসনটি ধরে রাখা জাপার জন্য কঠিন হবে বলে মনে করে স্থানীয় সচেতন মহল।

এ আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ মল্লিক। ২০০৮, ’১৪ ও ’১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। মহাজোটের আসন সমঝোতায় তাঁকে শেষ পর্যন্ত সরে যেতে হয়। এবারও তাঁর পরিণতি পুরোটাই কেন্দ্রীয় সমঝোতার ওপর নির্ভরশীল।

স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুল আলম চুন্নু বলেন, বাকেরগঞ্জ আসনটি আওয়ামী লীগের। জাপা পরবাসীর মতো আওয়ামী লীগের ওপর ভর করে এমপি হচ্ছে। তারা কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের আসন পুনরুদ্ধারে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকব। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বাধা নেই।

জাসদের মো. মহসীন বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকলে তাদের সঙ্গে আমার তথা জাসদের সমঝোতা হতে পারে। কিন্তু জাপা প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আসনটি জাপাকে দেওয়া হলে আমি সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকব। জনগণ আমার সঙ্গে আছে। তিনি অভিযোগ করেন, পাশের দুমকী উপজেলার রুহুল আমিন বাকেরগঞ্জে ‘উড়ে এসে জুড়ে’ বসেছেন। এবার ছাড় দেওয়া হবে না।

দুই প্রার্থী জাপার হুমকি যে কারণে::

বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের এবং জাপা ও ইসলামী আন্দোলনের একজন করে। গত ৩০ নভেম্বর চুন্নু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ৭ জন চেয়ারম্যান। এর দু’দিন আগে হাফিজ মল্লিক মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শুধু নিজের এলাকা ফরিদপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সঙ্গে ছিলেন। জানা গেছে, বর্তমানে পাদ্রীশিবপুর, ভরপাশা, রঙ্গশ্রী ও ফরিদপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজ মল্লিকের প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন ডাকুয়া এবং কলসকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান আছেন নীরব ভূমিকায়।

চুন্নু ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ১৯ হাজার ৬৯৪ ভোট পেয়েছিলেন। ওই বছর ধানের শীষের কাছে ১৩ হাজার ১৪৬ ভোটে হারেন নৌকার প্রার্থী। ২০০৯ সাল থেকে চুন্নু টানা ৩ বার উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ে তাঁর রয়েছে আলাদা পরিচিতি।

জাপার নির্বাচনী ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্বাচনে একক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাপার প্রার্থী ছিলেন রুহুল আমিন হাওলাদার। প্রতিটি নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে থাকা এ প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ছিল যথাক্রমে ১৯ হাজার ৪৮৬, ১৫ হাজার ৬৬১ এবং ২০ হাজার ১২০টি।

জাসদের মো. মহসীন জনপ্রতিনিধি হতে না পারলেও এলাকার কয়েকটি বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখায় তাঁর রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। প্রকল্পগুলো হলো– নির্মাণাধীন গোমা ও নেহালগঞ্জ সেতু, বরিশাল-বাউফল সড়ক নির্মাণ, নদীভাঙন রোধ প্রকল্প ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বহুতল ভবন নির্মাণ। গত এক বছরে উপজেলার সব ইউনিয়নে জাসদের সম্মেলন ও কমিটি গঠন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী ছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড-বাকেরগঞ্জ উপজেলার সভাপতি ফরুক হোসেন মল্লিক বলেন, জাপার বিরুদ্ধে যিনি শক্তিশালী প্রার্থী থাকবেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি তাঁর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা চুন্নুর সঙ্গে আছি।

জাপার প্রার্থী নাসরিন জাহান রত্না আমিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাপার প্রস্তাবনা রয়েছে যারা বর্তমান এমপি আছেন, তাদের সবাইকে মহাজোটের প্রার্থী করার জন্য। এ বিষয় চূড়ান্ত হবে ১৭ ডিসেম্বর।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *