শিরোনাম

বরিশালে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন

Views: 35

বরিশাল অফিস : বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ-ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর বুধবার (০৪ আগস্ট) সকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাতের ঘটনায় আহতরা বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আহতদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. এস এম মনিরুজ্জামান। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ নজরুল হোসেন।

এদিকে আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সাত দফা দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে বলেন, একজন গরিব বাসচালকের কাছে একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে ৬০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয় এবং তাকে জিম্মি করে ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।

পরবর্তীতে আরও ২০ হাজার টাকা আদায়কালে দুজন চাঁদাবাজ বটতলা এলাকায় এলাকাবাসীর হাতে আটক হন। এলাকাবাসীর অনুরোধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়ে চাঁদাবাজদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

পরে ঘটনাক্রমে জানা যায়, চাঁদাবাজ দুজন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিষয়টি বিবেচনা না করে এবং দুজন চাঁদাবাজের পক্ষ নিয়ে রাত ১২টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসযোগে একদল শিক্ষার্থী এসে বটতলায় সাধারণ শিক্ষার্থী এবং পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায়।

তখন বরিশালের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানমাল রক্ষার্থে জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেস স্টাডি না করেই নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চাঁদাবাজ শিক্ষার্থী দুজনের পক্ষে দেশীয় অস্ত্র এবং ট্রাকভর্তি ইট-পাথর নিয়ে বিএম কলেজে হামলা চালায়।

এই হামলায় বিএম কলেজের শিক্ষার্থী এবং সহযোগিতায় এগিয়ে আসা অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা গুরুতর আহত হন। এসময় সন্ত্রাসীরা বিএম কলেজের পরিবহণ পুলের সব বাস, ড্রাইভারদের রুম, মুসলিম হল, হিন্দু হল এবং মহাত্মা অশ্বীনি কুমার ছাত্রাবাসসহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে ভাঙচুর করে।

বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, রাত ১টায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কীভাবে বাস নিয়ে অন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রওনা হওয়ার অনুমতি দেয়, তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা এর জবাব চাই। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল তথা দক্ষিণবঙ্গের জ্ঞানের বাতিঘর শতবর্ষী বিএম কলেজের বনমালী গাঙ্গুলি ছাত্রী হোস্টেলে হামলা করেছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার নয় ৷ এসময় আশপাশে বিএম কলেজের শিক্ষকদের বাসায়, সাধারণ মানুষদের বাসাবাড়ি এবং দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়। এতে করে আতঙ্ক বিরাজ করে কলেজ এলাকায় থাকা সর্বসাধারণের মাঝেও। সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীরা শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে স্বাস্থ্যসেবা নিতে গেলে সেখানেও তারা সড়কে বাধা দেন। সংঘর্ষের সময় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ হামলাকারীকে আটক করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের সবাইকে আমরা নিজেরা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রশাসনিকভাবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী হাতে হস্তান্তর করি।

এসব অভিযোগ এনে বিএন কলেজের শিক্ষার্থীরা ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হল- বাস নিয়ে আসা হামলাকারী, বটতলায় চাঁদাবাজকারী, এর পেছনে মদতদাতা এবং উসকানি প্রদান করা সবার সুষ্ঠু বিচার করা; মধ্যরাতে বিএম কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলার ফলে যেসব শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন তাদের সম্পূর্ণ চিকিৎসার ব্যয়ভার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গ্রহণ করা; বিএম কলেজসহ সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীকে কোনোরূপ হয়রানি না করা; বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল শহরে কোনো ধরনের অরাজকতা যাতে সৃষ্টি করতে না পারে সেই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা; কলেজ, সব হোস্টেল এবং সাধারণ মানুষের বাসাবাড়ি, দোকানপাট ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনার সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেয়া; হামলায় জড়িত সব সন্ত্রাসীকে অতিদ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যতে আর কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হলে এর দায়ভার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কেই নিতে হবে।

ঘটনাটির বিষয়ে বিএম কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ডিন ড. মো. শফিউল আলম।

প্রসঙ্গত, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ও সরকারি ব্রজমোহন কলেজের (বিএম) শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাতভর দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয়পক্ষের শতাধিক আহত হয়েছেন। দুই পরিবারের বাড়ির মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধে এ সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার রাত সা‌ড়ে ১২টা থেকে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যা দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *