শিরোনাম

বরিশালে সূর্যমুখি তেলবীজের আবাদ ও উৎপাদন বাড়ছে

Views: 40

বরিশাল অফিস :: বরিশালে সূর্যমুখির আবাদ ক্রমে বানিজ্যিক রূপলাভ করছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই থেকে উপকারী এ তেল বীজ উৎপাদনের কারিগরি সহায়তা প্রদানের পরে সূর্যমুখির আবাদে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল মহল।

চলতি রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমুখি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করছেন কৃষিযোদ্ধারা। এ অঞ্চলে এবার ১২টি তেল মাড়াই মেশিন সরবরাহ করেছে ডিএই। গত বছর রবি মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার টনেরও বেশী সূর্যমুখি উৎপাদনের পরে এবার প্রায় ১৬ হাজার টন লক্ষ্য নির্ধারন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ৮০ ভাগেরও বেশী জমিতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে।

১৯৭৫ সাল থেকে দেশের উপকূলীয় জেলা বরিশাল ও পটুয়াখালী ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমুখীর পরীক্ষামূলক আবাদ শুরু হলেও নানা প্রতিকূলতায় দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশকেও এর খুব বড় ধরনের সম্প্রসারণ ঘটেনি। তবে গত তিন বছর ধরে সূর্যমুখির আবাদ বাড়ছে। ডিএই’র মতে গত বছর দেশে ১৪ হাজার ৭শ হেক্টরে প্রায় ২৮ হাজার টন উৎপাদনের পরে চলতি মৌসুমে ১৬ হাজার ২৩০ হেক্টরে প্রায় ৩২ হাজার টন সূর্যমুখি উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে।

তবে এখনো দেশে সূর্যমুখী তেল-এর তেমন কোন বাণিজ্যিক উৎপাদন না হওয়ায় অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এ তেল বীজের আবাদ ও উৎপাদনও বাড়ছে না বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা। এবার বরিশাল সহ কয়েকটি এলাকায় ডিএই থেকে বেশ কিছু ক্রাসিং মেশিন সরবরাহ করায় কৃষকরা সম্ভাবনাময় এবং মানবদেহের জন্য উপকারী সূর্যমুখি আবাদ ও উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে।

বছর কয়েক আগে কয়েকটি এনজিও উপাকূলীয় এলাকায় সূর্যমুখী আবাদে কৃষকদের মাঝে বীজ সরবরাহ করলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফলন সংকট সহ বিপণন ব্যবস্থার অভাবে পরবর্তিতে তার কোন সম্প্রসারণ ঘটেনি। এবারো এনজিও বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাক বীজ সরবরাহ করছে। বিএডিসি’র বীজ দপ্তরে এখনো এ তেল বীজের সরবরাহ কাঙ্খিত নয়।

অপরদিকে গত কয়েক বছর ধরেই রবি মৌসুমে একাধিক ঘূর্ণিঝড় সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সূর্যমুখীর উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটে। এছাড়া প্রতি বছরই আবাদকৃত জমির সূর্যমুখী ফুলের বাগানে টিয়া পাখির আক্রমনে এ তেলবীজ পাখির পেটে চলে যাওয়ায়ও কৃষকরা যথেষ্ট হতাশ হয়ে পড়েছিলেন।

কৃষকরা টিয়ার আক্রমন বাঁচিয়ে বীজ ঘরে তুলতে পারছিলেন না। তবে টিয়া পাখি তাড়াবার প্রযুক্তি সহ ঘূর্ণিঝড় থেকে সূর্যমুখী রক্ষায় নানা কৌশল অবলম্বন সহ কৃষকরা নিজেরাই তেল উৎপাদন করতে পাড়ায় এখন সূর্যমুখী আবাদে আস্থা অনেকটাই ফিরে এসেছে। ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-বারি’ এ পর্যন্ত ‘কেরানী-ডিএস-১’ , ‘বারি সূর্যমুখী-২’, ‘বারি সূর্যমুখী-৩’ ও ‘হাইসান-৩৩’ নামের উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল সূর্যমুখী ফুলের একাধিক নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। তবে এসব সূর্যমুখীর বীজ ও আবাদ প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে দ্রুত পৌঁছে দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, সূর্যমুখী তেল জনস্বাস্থ্যের জন্য যেমন যথেষ্ট উপকারী ও পুষ্টিকর তেমনি নিরাপদ। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে বারি উদ্ভাবিত সূর্যমুখীতে ৪০-৪৫% পর্যন্ত তেল পাওয়া যায়। ক্যালসিয়াম, কপার, আয়রন, জিঙ্ক ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ সূর্যমুখী তেলে ভিটামিন-ই ও ভিটামিন-কে রয়েছে। বনস্পতি এ তেল ভেষজগুনেও সমৃদ্ধ। সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ সূর্যমুখী তেল ক্যান্সার প্রতিরোধী।

পাশপাশি রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টরল, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে সূর্যমুখী তেলে ‘ওমেগা-৬’ এবং ওমেগা-৯’ রয়েছে। এ তেল শারীরিক দুর্বলতা সহ মানসিক চাপ হ্রাসেও সহায়তা করে। এমনকি মাইগ্রেন সমস্যা ছাড়াও হাঁপানি, গ্যাস্ট্রিক, আলসার ও হাড়ের জোড়া ব্যাথা নিরাময়েও সূর্যমুখী তেল সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের কাছে সূর্যমুখী একটি উৎকৃষ্ট তেল ফসল হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশেই এ তেলবীজ গুরুত্বপূর্ণ একটি তেল ফসল হিসেবে বিবেচিত। সূর্যমুখীর বীজে ৪০-৪৫% পর্যন্ত লিনোলিক এসিড রয়েছে, অথচ এ তেলে কোন ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড নেই। বারি উদ্ভাবিত বীজ থেকে সূর্যমুখীর ফলন হেক্টর প্রতি ১.৭ থেকে ৩টন পর্যন্ত হয়ে থাকে বলে ডিএই’র বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জানিয়েছেন।

সূর্যমুখী উৎপাদনে এর জীবনকাল জাত ভেদে ৯০ থেকে ১২০ দিন। তবে উন্নত বীজ, পরিমিত সার প্রয়োগ সহ আবাদ পরবর্তী সুষ্ঠু পরিচর্যা এ তেল ফসল উৎপাদনের অন্যতম পূর্বশর্ত বলে জানিয়েছেন ডিএই’র কারিগরি বিশেষজ্ঞরা।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *