বরিশাল নগরীজুড়ে ভয়াবহ পানির সংকট চলছে, যা চাহিদার ৬০ শতাংশ ঘাটতি নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানির সংকট তীব্র হয়েছে। সম্প্রতি, নগরীর নথুল্লাবাদ ও কাজীপাড়ার পাম্প হাউজ দুটি প্রায় অচল হয়ে পড়েছে, কারণ এখানকার গভীর নলকূপ থেকে পানি উঠছে না।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) সূত্রে জানা গেছে, নগরীর দৈনিক পানির চাহিদা প্রায় ৭ কোটি ২০ লাখ লিটার, যেখানে ৩৮টি পাম্পের মাধ্যমে ৩ কোটি ২০ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমের কারণে পানির স্তর আরও নিচে নেমে যাওয়ায় সরবরাহ আরও কমে গেছে এবং গড়ে ১০ লাখ লিটার পানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর ফলস্বরূপ, বরিশালের বেশিরভাগ এলাকাতে পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, নগরীতে ঢালাওভাবে গভীর নলকূপ খনন, কাঁচা নালা এবং আরসিসি ড্রেন নির্মাণের ফলে পানির স্তর আরও নিচে নেমে যাচ্ছে। তারা দাবি করছেন, গত কয়েক বছরে বৃষ্টির ঘাটতি ও প্রকৃতির বিরূপ আচরণ পানির স্তর কমানোর অন্যতম কারণ। এই সমস্যা বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে প্রকট হয়ে উঠেছে, এবং চলতি মাসে পানির উত্তোলন অনেকাংশে কমে গেছে।
পানির সংকট মোকাবেলা করতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও প্লান্ট দুটি গত পাঁচ বছরে বন্ধ ছিল, এখন সেগুলো চালু করার জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এবং প্লান্ট চালু করতে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে।
২০০৩-০৪ অর্থবছরে সরকারের অনুমোদন নিয়ে দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এবং ২শ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে প্রকল্পটি সম্পন্ন হলেও, এটি সরাসরি নগরবাসীর কাছে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা না করে শুধুমাত্র ওভারহেড ট্যাংকগুলোতে পানি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যার ফলে প্রকল্পটি কার্যকর হয়নি। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন এই প্লান্ট দুটি চালু করতে ব্যাপক চেষ্টা করছে এবং আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্লান্ট দুটি চালু করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম