শিরোনাম

বরিশাল নগরীর সাতটি মরা খালে যৌবন ফেরানোর চেষ্টা

Views: 85

বরিশাল অফিস :: কীর্তনখোলা নদী থেকে বরিশাল নগরীতে প্রবেশ করা ২৪টি খাল দখল ও দুষনে যখন হারিয়ে যেতে বসেছে, ঠিক তখনই সাতটি খালের যৌবণ ফেরাতে খনন কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এবং সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের প্রাণপন প্রচেষ্টায় মরা খালগুলো পুনরায় নতুন করে প্রান ফিরে পাঁচ্ছে। দখল ও দুষনে হারিয়ে যেতে বসা নগরীর মধ্যকার সাতটি খালে পানির প্রবাহ ফেরাতে গত কয়েকদিন থেকে কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে নগরীর কোলঘেঁষে বয়ে যাওয়া আমানতগঞ্জ, জেলখাল, রূপাতলী খাল, পলাশপুর খাল, সাগরদী খাল, চাঁদমারী খাল এবং ভাটারখাল দীর্ঘদিন পরে হলেও অস্তিত্ব ফিরে পেতে যাচ্ছে।

একই সাথে ম্যাপ অনুযায়ী উদ্ধার হচ্ছে দখলকৃত খালের পাড়। খনন কাজ শেষ হলে নগরীর প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ বাসিন্দা জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী মুক্তি লাভ করবে বলে জানিয়েছেন সচেতন নগরবাসী।

সূত্রমতে, পর্যায়ক্রমে নগরীর মধ্যে থাকা ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ছোট-বড় খালগুলোকেও সংস্কারের আওতায় আনা হবে বলে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাধীনতার পূর্বে বরিশালে ৪৬টি খালের অস্তিত্ব ছিলো। তবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ টিতে। বর্তমানে বড়-ছোট মিলিয়ে টিকে থাকা ২৪টি খাল অস্তিত্ব সংকটে পরেছে। আর হারিয়ে গেছে ২২টি খাল। দখল-দূষণ আর অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পরা মরাখালে পানি প্রবাহ না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে নগরীর মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ সাতটি প্রধান খালের খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। যেকারণে আনন্দে ভাসছে ওইসব এলাকার বাসিন্দারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, নগরীর সাতটি খাল খননে ছয় কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। এরমধ্যে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় পলাশপুর খালের এককিলো সাতশ’ মিটার, এক কোটি নয় লাখ টাকায় আমানতগঞ্জ খালের দুইকিলো ৫০ মিটার, দুই কোটি ৬৭ লাখ টাকায় সাগরদী খালের নয় কিলোমিটার, ২৮ লাখ টাকায় রূপাতলী খালের এক কিলোমিটার, ৩২ লাখ টাকায় চাঁদমারি খালের এককিলো ৪২১ মিটার, চার লাখ টাকায় ভাটার খালের ১৬০ মিটার এবং ২৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকায় জেল খালের দুই কিলোমিটারের খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে নগরীর জলাবদ্ধতা ঠেকাতে সাতটি খালের ১৯ কিলোমিটার অংশে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে খাল খননের কাজ শুরু করা হয়েছে।

নগরীর বাসিন্দা নাজমুল সানি বলেন, বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি কিংবা স্বাভাবিক জোয়ারে খাল উপচে সড়কে হাঁটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে খালগুলো সংস্কারের দাবি উঠলেও বিগত দুইজন সিটি মেয়র জলাবদ্ধতা দূর করতে কোন ধরনের পদক্ষেপই গ্রহণ করেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমান মেয়র দায়িত্বগ্রহণের পর পরই স্থানীয় সংসদ সদস্যর হাতে পরিকল্পনা করে খাল খননের কাজ শুরু করেছেন। এসব খাল সঠিকভাবে খনন করা হলে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাবে নগরবাসী।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ বিন ওলিদ বলেন, চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে প্রথমধাপের খাল খননের কাজ শেষ করা হবে। এরমাধ্যমে আগামী বৃষ্টি মৌসুমে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে নগরবাসীর। উল্লেখ্য, নগরীর মধ্যকার সাতটি খাল খননের জন্য ২০২২ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করতে গিয়ে তৎকালিন সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের বাঁধার মুখে পরেন। এখন সেই বাঁধা কেটে গেছে নবনির্বচিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত দায়িত্ব গ্রহণ করার পর। তাই নানা বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতটি খালের খনন কাজ শুরু করেছে। জনগুরুত্বপূর্ণ সাতটি খালের খনন কাজ শুরু করায় স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক শামীম এবং সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে ধন্যবাদ জানিয়ে নগরীর বাসিন্দা তানভির আহম্মেদ অভি বলেন, জাহিদণ্ডখোকন ভাই বরিশাল নগরীর উন্নয়নে এখন আর কোন বাঁধা নাই।

নগরী এখন ‘ইমার্জেন্সী রোগী’ ॥ বরিশাল নগরীর দায়িত্ব গ্রহণের পর একসাথে সব কাজে হাত দিতে হচ্ছে। একটা বাদ দিয়ে আরেকটা ধরার কোন সুযোগ নেই। বরিশাল এখন ইমার্জেন্সী রোগী। তাই দ্রুত চিকিৎসার জন্য আমি যথাসাধ্য কাজ করছি। কথাগুলো বলেছেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। সিটি মেয়র বলেন, গত ১০ বছরে চরম অবহেলিত অবস্থায় ছিলো প্রাচ্যের ভেনিস বরিশাল নগরী। নানারোগে নগরীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে রোগ বাসা বেঁধেছে। তাই বরিশালকে পুনরায় সুস্থ করে তুলতে হবে। যেকারণে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হাতে নেওয়া হয়েছে।

মেয়র আরও বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করতে ইতোমধ্যে সাতটি খালের খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি খালে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করা হচ্ছে। খালের দুইপাড়ে সৌন্দর্য্য বর্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অতিসম্প্রতি সাগরদী খালের দুইপাড়ের এক কিলোমিটারের অধিক ওয়াক ওয়ে ও সাইকেলিং ওয়ে নির্মাণ কাজের উদ্বোধণ করা হয়েছে। সেখানে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর থাকবে সাধারণ মানুষের বিশ্রামের বেঞ্চ।

আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মানুষ যেন খালের তীরে বসে অবসর সময় কাটাতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হবে। মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, আমি একটি ড্রেন পরিস্কার করতে লোক পাঠিয়েছিলাম। তারা ফেইল করেছে। ড্রেইনটির ম্যানহোল নেই। আর ময়লা জমে ভেতরে পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে। এখন সেটা ভাঙতেও কষ্ট হচ্ছে। ড্রেনগুলো নিয়মিত মেইনটেন্যান্স না করলে জলাবদ্ধতা তো হবেই। আর বরিশাল নগরীতে সেটাই হয়েছে। খালগুলোকে মশা তৈরির কারখানা বানানো হয়েছে। বিগত ১০ বছরে নগরীতে পরিকল্পিতভাবে কোনো কাজই হয়নি।

বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশালের উন্নয়নে ব্যাপক আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন প্রাচ্যের ভেনিসের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে। তাই সিটি মেয়রসহ নগরবীদদের পরামর্শ নিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী বরিশাল নগরীকে বসবাসের উপযোগী শহরে রূপান্তরের পাশাপাশি প্রাচ্যের ভেনিসের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা হবে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *