Views: 30
বরিশাল অফিস :: বরিশাল শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত আইন মহাবিদ্যালয় বা বরিশাল ল কলেজের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন কলেজে অধ্যায়নরত সাধারণ শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে ক্ষমতার রদবদলের প্রভাবে এই কলেজের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে একাধিক অভিযোগ করেন প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর বেশিরভাগ অংশ।
২৭ জুন বৃহস্পতিবার সকালে কলেজ প্রশাসন, শিক্ষার্থী এবং ২৮ জুন শুক্রবার বরিশালের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও বাস টার্মিনাল দীর্ঘদিন ধরে সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ অনুসারী লোকজন ধারা নিয়ন্ত্রিত ছিলো।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের মহানগরীর কোথাও কোনো প্রভাব ছিলোনা। নতুন মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই প্রথমে বাস টার্মিনাল এবং পরবর্তীতে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্বে রদবদল ঘটতে শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১০ জানুয়ারী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত আইন মহাবিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল ও সভাপতিকে বের করার জন্য মারধরের ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ে সংবাদ হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। ঐ সময় আইন মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসাইন জানান, বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ ছাত্র সংসদের অস্থায়ী ছাত্র কর্মপরিষদের ম্যাগাজিন সম্পাদক ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য আরিফুর রহমান অপু ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আসাদুজ্জামান আজিম গত ১০ জানুয়ারী তাদের উপর হামলা চালিয়েছেন। এরপর তারা এটাও বলেছেন আমাদের কিছুতেই আর দায়িত্ব পালন করতে দেবেন না। আমরা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এর লোক এটাই আমাদের অপরাধ বলে গালাগালিও করেছেন।
এরপর হঠাৎ করেই পুনরায় সভাপতিকে অপসারণের দাবীতে একদল শিক্ষার্থী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে সড়কের উপর দাঁড়িয়ে। তারা ২৭ জুন বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় কলেজের সম্মুখে কালিবাড়ি সড়কে এ মানববন্ধন করে। মানববন্ধন চলাকালে শিক্ষার্থীরা আনোয়ার হোসেনের আর্থিক অনিয়মের একাধিক বিষয় তুলে ধরে তার অপসারনণ দাবী করে ।
শিক্ষার্থী মাহী, গাজী মেহেদী হাসান ও বেল্লাল হোসেন তাদের বক্তৃতায় অভিযোগ তোলেন, আনোয়ার হোসেন সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর থেকেই নানা কৌশলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। ওই টাকার কোন বিল ভাউচার দেয়া হয় না। এ নিয়ে কথা বললে ওই শিক্ষার্থীকে নানাভাবে লাঞ্ছিত করার হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তারা। এখানেই শেষ নয়, শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও আর্থিক বাণিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে । যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা শিক্ষক হিসেবে তেমন যোগ্য না বলে জানান আন্দোলনকাারী শিক্ষার্থীরা। এছাড়া কলেজের ফান্ডের টাকা দিয়ে আনোয়ার হোসেন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তার স্ত্রীর নির্বাচন পরিচালনা করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা। যা বিল ভাউচারে প্রমাণ রয়েছে বলে জানালেন বক্তারা।
এ সব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ২৮ জুন শুক্রবার বন্ধের দিনে, কলেজ ক্যাম্পাস ও আশেপাশের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১০ জানুয়ারী সন্ধ্যায় একদল দুর্বৃত্ত অধ্যক্ষের কার্যালয়ে প্রবেশ করে ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মোস্তফা জামাল খোকন এবং পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে মারধর করেছে। তারপর থেকেই এই কলেজে শিক্ষার পরিবেশ ব্যহত হতে শুরু করে বলে জানান বাসিন্দারা। আর এই আইন মহাবিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বলেন, প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী আমরা এখানে পড়াশুনা করতে এসেছি। কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করতে আসিনি। আমরা এখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখতে চাই এবং এজন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবীর সাথে সহমত পোষণ করে বরিশালের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব কাজী মিজানুর রহমান বলেন, আইন মহাবিদ্যালয় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে কোনো অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে তা দেখার দায়িত্ব জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। যেহেতু একটি অভিযোগ উঠেছে, তা দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
এদিকে মানববন্ধন করা শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ বহিরাগত দাবী করে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসাইন বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য আরিফুর রহমান অপু ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আসাদুজ্জামান আজিমের ষড়যন্ত্র এই কলেজের বাইরে মানববন্ধন ঘটনা। আমি এখানে যুক্ত হবার পর ল কলেজের আশেপাশে থাকা তাদের অনেক অবৈধ বাণিজ্যি বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে তারা আমাকে সরাতে উঠেপড়ে লেগেছে। আমি আসার পর প্রতিজন শিক্ষার্থীর বেতন, ভাতা সবকিছু ব্যাংকের মাধ্যমে হচ্ছে। কারচুপি বা দূর্নীতি করার কোনো সুযোগ এখানে নেই বলে জানান আনোয়ার হোসাইন।
এ দিকে বরিশালের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিক সমাজের সাবেক সভাপতি শাহ সাজেদা বলেন, শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে এখানে জরুরী তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাবো বিষয়টির দ্রুত সমাধান করতে।