বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) সুনির্দিষ্ট ইমারত নীতিমালা না থাকার কারণে শহরের নাগরিকরা ভবন নির্মাণে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। দুই বছর ধরে নতুন ভবনের নকশা অনুমোদন না পাওয়ায় আবাসন খাত এবং ব্যক্তিপর্যায়ের ভবন নির্মাতারা বিপাকে পড়েছেন। ভবন নির্মাণে এই জটিলতা ও হয়রানি নিরসনের পাশাপাশি নগরীর জন্য উপযোগী ইমারত নির্মাণবিধি প্রণয়নের দাবি নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, আগে নকশা অনুমোদন নিয়ে নানা ধরনের নৈরাজ্য ও বাণিজ্য ছিল, কিন্তু নতুন প্রশাসন আসার পর সেই সব বন্ধ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে তারা অর্ধশত ভবনের নকশা অনুমোদন সম্পন্ন করেছেন এবং শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করতে চলেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী বরিশাল সিটি করপোরেশন ভবনের নকশার অনুমোদন দেওয়া শুরু করে। পরবর্তী সময়ে, ২০০৮ সালে শওকত হোসেন হিরণ মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই বিধিমালার পরিমার্জিত সংস্করণ কার্যকর করা হয়। ২০১০ সালের পর থেকে, এটি নাগরিকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং নকশা জমা দেওয়ার হার কমে যায়। ২০২০ সালে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বরিশাল ইমারত নির্মাণবিধি-২০২০ নামে একটি নতুন বিধি প্রণয়ন করেন, যা কিছুটা বাস্তবতার সাথে মিল রেখে তৈরি হয়েছিল।
তবে বর্তমান মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন ২০২০ সালের বিধি বাতিল করে ১৯৯৬ সালের বিধিমালা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। এর পর থেকে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য নকশা অনুমোদনের জন্য ৯৫০টিরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে, কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বরিশাল নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সদস্যসচিব প্রকৌশলী আবু সালেহ বলেন, “বর্তমান মেয়র এবং সিটি করপোরেশন যে বিধি অনুসরণ করছেন তা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ১৯৯৬ সালের বিধি অনুসারে, অধিকাংশ রাস্তার প্রশস্ততা কম থাকায় ২ থেকে ৫ তলার বেশি প্ল্যান অনুমোদন সম্ভব নয়।”
তিনি আরও জানান, “নগরীর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ইমারত নির্মাণ বিধিমালা থাকা প্রয়োজন, যাতে ভবন নির্মাণের জন্য অনুমোদন দ্রুত এবং কার্যকরীভাবে দেওয়া যায়। এছাড়া দুর্নীতি রোধে ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস’ চালু করা এবং জমির শ্রেণি অনুযায়ী নকশা অনুমোদন প্রক্রিয়ায় অবিলম্বে পরিবর্তন আনা উচিত।”
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, “আমরা বাড়ি নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশনে জমা দেওয়া প্ল্যানগুলো যাচাই-বাছাই করছি। এরই মধ্যে ৫০টি প্ল্যান যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে এবং শিগগিরই সেগুলো অনুমোদন করা হবে।”
এছাড়া তিনি জানান, নকশা অনুমোদন সংক্রান্ত যে নৈরাজ্য ও বাণিজ্য ছিল, তা এখন বন্ধ করা হয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে।
মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম