শিরোনাম

বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে পারছে না জিও ব্যাগ

Views: 79

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: গলাচিপার তেঁতুলতলা গ্রামের পাশে ভাঙছে রাবনাবাদ নদীর তীর। সেখানে ফেলা জিও ব্যাগও ধসে পড়ছে।

ফলে রাবনাবাদ নদীর ভাঙনে ঝুঁকিতে পড়ছে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বেড়িবাঁধের একটি অংশ। এতে উপজেলা সদরের সঙ্গে পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা করছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে বেড়িবাঁধ ও এর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সড়ক রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এতেও ভাঙন থামছে না। উল্টো বেশকিছু জিও ব্যাগ ধসে পড়ছে নদীতে।

এলাকাবাসী জানায়, ঘূর্ণিঝড় রিমাল আঘাত হানার পর বাঁধের একটি অংশ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে যায়। এ সময় প্লাবিত হয় ইউনিয়নের আটখালী, ডাকুয়া ও হোগলবুনিয়া গ্রাম।

আটখালীর কৃষক বাদল মৃধা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে লবণপানি ঢুকে পড়েছিল। এতে তাঁর ৫ কুড়ি পানের বরজ নষ্ট হয়ে যায়।

ডাকুয়ার তাজুল ইসলামের ভাষ্য, জোয়ারের নোনাপানি বাঁধ উপচে বাড়িঘর ও ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ছে। ফলে আগামী মৌসুমে চাষবাস করাই কঠিন হয়ে পড়বে।
জোয়ারে রাবনাবাদ নদীর তীব্র ঢেউ বাঁধে আছড়ে পড়ে। এতে ভেঙে যাওয়া অংশ পুরো ধসে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন আটখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক দীপক নারায়ণ ভূঁইয়া।
তাঁর ভাষ্য, বিশেষ করে অমাবশ্যা-পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের প্রবল চাপ থাকে। ভাঙন ঠেকাতে বালুর বস্তা ফেলা হলেও এ সময়কে ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতেও সম্প্রতি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

পটুয়াখালী পাউবো ও এলজিইডি সূত্র জানায়, ১৯৭৬-১৯৭৭ অর্থবছরে গলাচিপায় ৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করে পাউবো। ৫৫/১ পোল্ডারের বাঁধটি গলাচিপা পৌর এলাকা থেকে শুরু হয়েছে গলাচিপা সদর ইউনিয়ন, পানপট্টি, রতনদী-তালতলী ইউনিয়ন, ডাকুয়া পর্যন্ত গেছে। ১৯৯৫-১৯৯৬ অর্থবছরে ওই বেড়িবাঁধের ওপর সড়ক নির্মাণ করে এলজিইডি। গলাচিপা থেকে বকুলবাড়িয়া ­ইউনিয়নের পাতাবুনিয়া পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার অংশে কার্পেটিং করা হয়। এ সড়কটি গলাচিপা উপজেলা সদরের সঙ্গে ডাকুয়া, কলাগাছিয়া, চিকনিকান্দি, গজালিয়া ও বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ সহজ করে দেয়। এ ছাড়াও সড়কটি দিয়ে পটুয়াখালী জেলা সদর, দশমিনা ও বাউফল উপজেলায় সহজে যাতায়াত করা হয়। ফলে এটি এখন জেলার ব্যস্ততম একটি সড়ক।

আরো পড়ুন : পরকীয়ার অপবাদে আ. লীগ নেতাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

ডাকুয়া এলাকার বাসিন্দা গাজী গোলাম মোস্তফা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা। তাঁর আশঙ্কা, যেভাবে বাঁধের পাশাপাশি সড়কের অংশ নদীতে ভেঙে পড়ছে, এতে তাদের এলাকা সদর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন তিনি।

ডাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটিও ভাঙনঝুঁকিতে আছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ রায়। তাঁর ভাষ্য, তেঁতুলতলা বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ঘরবাড়ির পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির, দুটি বিদ্যালয়, প্রাচীন একটি জমিদারবাড়ি, সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহমুদের কবরস্থানটিও হুমকির মুখে। সড়কটি নদীতে ধসে পড়লে পাঁচ ইউনিয়নের দেড় লাখ মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে। তাই নদীশাসন ও খনন করে গতিপথ বদলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এলজিইডির গলাচিপা উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, সম্প্রতি তাঁর দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ভাঙনঝুঁকিতে থাকা সড়কটি পরিদর্শন করেছেন। শুরুতে বাঁধ মেরামত করে পরে কার্পেটিং সড়ক নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এখন বাঁধের কাজ চলছে। তা শেষ হলেই সড়ক নির্মাণ শুরু করা যাবে।

রাবনাবাদের জোয়ারে তেঁতুলতলায় বাঁধের ১০০ মিটার ভাঙনের কবলে পড়েছে জানিয়ে পটুয়াখালী পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মিরাজ গাজী বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল ও পূর্ণিমার জোয়ারে ১০ মিটার অংশ ধসে পড়েছে। সঙ্গে সড়কও ভেঙেছে। ভাঙন রোধে তারা জিওব্যাগ ফেলছেন।

তাঁর দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন জানান, ভাঙন রোধে প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার জিওব্যাগ ফেলে নদী সংরক্ষণকাজ শুরু হয়েছে। এতে এক কোটি ৭২ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১২ হাজার ব্যাগ ফেলা হয়েছে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *